একদিকে, আমাদের কর্ত্তব্য এই যে,—আমরা আদর্শের দিকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপেই অগ্রসর হই বা অতি ধীরে ধীরে অননুভাব্য গতিতে উহার দিকে হামাগুড়ি দিয়াই অগ্রসর হই, আমরা যেন উহাকে কখনও বিস্মৃত না হই। আবার অপর দিকে দেখা যায়, যদিও আমরা আমাদের চক্ষে হস্ত দিয়া উহার জ্যোতিকে ঢাকিয়া রাখিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করি, তথাপি উহা সর্ব্বদাই আমাদের সম্মুখে অস্পষ্টভাবে বিদ্যমান রহিয়াছে।
আদর্শই কর্ম্মজীবনের প্রাণ। আমরা দার্শনিক বিচারই করি, অথবা প্রাত্যহিক জীবনের কঠোর কর্ত্তব্যসমূহই সম্পন্ন করিয়া যাই, আদর্শ আমাদের সমগ্র জীবনটাকে আচ্ছন্ন করিয়া বর্ত্তমান রহিয়াছে। আদর্শের রশ্মি নানা সরল বা বক্র রেখায় প্রতিবিম্বিত ও পরাবর্ত্তিত (Refracted) হইয়া আমাদের জীবনগৃহের প্রতি ছিদ্রপথে আসিতেছে, আর জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে প্রত্যেক কার্য্যই ইহার আলোকে করিতে হয়, প্রত্যেক বস্তুই ইহার দ্বারা পরিবর্ত্তিত ও সুরূপ বা কুরূপ প্রাপ্ত ভাবে দেখিতে হয়। আমরা এক্ষণে যাহা, আদর্শই আমাদিগকে তাহা করিয়াছে, আর আদর্শই আমাদিগকে ভবিষ্যতে যাহা হইব, তাহা করিবে। আদর্শের শক্তি আমাদিগকে আচ্ছাদন করিয়া রাখিয়াছে, আর আমাদের সুখে দুঃখে, আমাদের বড় বা ছোট কার্য্যে এবং আমাদের ধর্ম্মাধর্ম্মে উহা অনুভূত হইয়া থাকে।