পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যুদ্ধ

নিজের পঁয়ত্রিশ হাজার সৈন্য নিয়ে উচ্চভূমির উপরে চন্দ্রগুপ্ত যে অর্ধচন্দ্র ব্যূহ রচনা করেছিলেন, আজ প্রায় সারাদিন ধ’রে অর্ধ লক্ষ ভারতের শত্রু তা ভেদ করবার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করছে! ব্যূহের সামনে হাজার হাজার মৃতদেহের উপরে মৃতদেহ পুঞ্জীভূত হয়ে উঠেছে,—সেখানে শত্রু-মিত্র একাকার হয়ে গিয়ে সৃষ্ট হয়েছে যেন মৃত নরদেহ দিয়ে গড়া অপূর্ব ও ভীষণ এক দুর্গ-প্রাচীর!

 গ্রীক-সেনাপতি ও শশীগুপ্ত পাশাপাশি দুই ঘোড়ার উপরে ব’সে যুদ্ধের গতি নিরীক্ষণ করছিলেন।

 গ্রীক-সেনাপতি ঊর্ধ্বদিকে তাকিয়ে দেখলেন, সূর্য জ্বলছে পশ্চিম আকাশে।

 শশীগুপ্তকে নিজের ভাষায় ডেকে তিনি বললেন, “সিসিকোটাস্! বেলা প’ড়ে এল। যুদ্ধ আজ বোধহয় শেষ হবে না।”

 শশীগুপ্ত বললেন, “সংখ্যায় আমাদের চেয়ে অনেক কম ব’লে শত্রুরা প্রতি আক্রমণ না ক’রে কেবল আত্মরক্ষাই করছে। ওরা উঁচু জমির উপরে না থাকলে এতক্ষণে যুদ্ধ শেষ হ’য়ে যেত।”

 সেনাপতি দৃঢ় স্বরে বললেন, “কিন্তু এ যুদ্ধ আজকেই শেষ করতে চাই।”

 —“কি ক’রে” সেনাপতি?”

 —“আমাদের ডানপাশে আর বাঁ-পাশে যত গজারোহী অশ্বারোহী আর রথারোহী সৈন্য আছে, সবাইকে মাঝখানে এনে এইবারে আমরা শত্রু-ব্যূহের মধ্যভাগ আক্রমণ করবো।”

 —“কিন্তু সেনাপতি, তাহ’লে আমাদের দুই পাশ যে দুর্বল হয়ে পড়বে!”

 —“পড়ুক। বীর গ্রীকদের কাপুরুষ ভারতবাসীরা ভয় করে। ওরা নিশ্চয়ই আমাদের প্রতি আক্রমণ করবে না।”

১০৩