পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যুদ্ধ

আমাদের ব্যূহের মাঝখানে একত্রে আক্রমণ করে, তাহ’লে আর কি আমরা আত্মরক্ষা করতে পারবো?”

 —“পারবো সুবন্ধু, পারবো,—অন্তত আজকের জন্যে আমরা আত্মরক্ষা করতে পারবো। ঐ শোনো, রণকুশল চন্দ্রগুপ্তের শঙ্খ-সঙ্কেত!..........ঐ দেখো, আমাদের যে পাঁচ হাজার সর্বশ্রেষ্ঠ সৈন্য এতক্ষণ যুদ্ধে যোগ না দিয়ে পিছনে অপেক্ষা করছিল, এইবার তারাও ব্যূহের মধ্যভাগ রক্ষা করতে এগিয়ে, আসছে! আরো দেখো, চন্দ্রগুপ্তের আদেশে আমাদের ধনুকধারী সৈন্যেরা ইতিমধ্যেই মাঝখানে এসে প্রস্তুত হয়েছে! সাধু চন্দ্রগুপ্ত, সাধু! তুমি মিথ্যা আমার শিষ্যত্ব গ্রহণ করনি!”

 তবু সুবন্ধুর সন্দেহ ঘুচল না। দ্বিধাভরে সে বললে, “কিন্তু—"

 —“মূর্খ, এর মধ্যে আর কোনো ‘কিন্তু’ নেই! আমরা আছি উচ্চভূমির উপরে। শত্রুদের রথ, গজ আর অশ্ব এর উপরে দ্রুতগতিতে উঠতে পারবে না। আমাদের ধনুকধারীরা সহজেই দূর থেকে তাদের প্রতি লক্ষ্য স্থির রাখতে পারবে। তাঁর এড়িয়ে যারা কাছে এসে পড়বে, তাদের বাধা দেবে আমাদের নূতন, অক্লান্ত, শ্রেষ্ঠ সৈন্যদল।...সুবন্ধু, আকাশের দিকে চেয়ে দেখো! বেলা আছে আর অর্ধ-প্রহর মাত্র! এই সময়টুকু কাটিয়ে দিতে পারলেই সন্ধ্যার অন্ধকারে চারিদিক ছেয়ে যাবে—আমরাও সময় পাবো আরো একরাত্রি! তারপর ভরসা তোমাদের রাজা পর্বতক!”[১]

 গ্রীক-সেনাপতি বিরক্ত মুখে ক্রুদ্ধ-দৃষ্টিতে দেখছিলেন, সাগরশৈলের তলদেশে গিয়ে অনন্ত সাগরের প্রচণ্ড তরঙ্গদল যেমন বিষম

১০৫
  1. একাধিক সংস্কৃত বিবরণীতে প্রকাশ, রাজা পর্বতকের সাহায্যেই চন্দ্রগুপ্ত গ্রীকদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন। বৌদ্ধ বিবরণীতেও ঐ-রকম কথা আছে। Cambridge History of Indiaর মতে গ্রীকদের ‘পুরু’ই হচ্ছেন ‘পর্বতক’। আধুনিক ঐতিহাসিকরাও এই মত গ্রহণ করেছেন। —লেখক।