পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

আবেগে ভেঙে পড়ে আবার ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে বারংবার, তাঁর গজারোহী রথারোহী ও অশ্বারোহীর দল তেমনি ভাবেই উচ্চভূমির উপরে উঠতে গিয়ে প্রতি বারেই মারাত্মক বাধা পেয়ে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে! সারথি, যোদ্ধা ও অশ্বহীন কত রথ নিশ্চল হয়ে গ্রীক সৈন্যদলের সামনে বাধা সৃষ্টি করছে, হিন্দুদের অব্যর্থ তীরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে কত হস্তী পাগলের মতো পালিয়ে এসে স্বপক্ষেরই মধ্যে ছুটাছুটি ক’রে শত শত গ্রীক সৈন্যকে পায়ের তলায় থেৎলে মেরে ফেলছে! হিন্দু ব্যূহ দুর্ভেদ্য!

 পশ্চিম গগনের অস্তাচলগামী সূর্যের পানে তাকিয়ে শশীগুপ্ত হতাশভাবে বললেন, “সেনাপতি, আজ যুদ্ধ শেষ হওয়া অসম্ভব!”

 মাথা নেড়ে তিক্ত কণ্ঠে গ্রীক সেনাপতি বললেন, “না সিসিকোটাস্, আজ আমি অসম্ভবকেও সম্ভব করতে চাই! বর্বর ভারত আজও ভালো ক’রে গ্রীক বীরত্বের পরিচয় পায়নি! তুমি এখনি আমার আদেশ চারিদিকে প্রচার ক’রে দাও! আমার ফৌযের ডান পাশ আর বাঁ পাশও একসঙ্গে অগ্রসর হোক্! সর্ব-দিক দিয়ে আক্রমণ করো, শত্রুদের একেবারে ঘিরে ফ্যালো!”

 সেনাপতির মুখের কথা শেষ হতে না হতেই দেখা গেল, একজন গ্রীক সেনানী ঘোড়ায় চ’ড়ে বেগে কাছে এসে দাঁড়াল।

 সেনাপতি বললেন, “কি আরিষ্টোন্‌টেস্? তোমার মুখ মাছের তলপেটের মতো সাদা কেন? তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে তুমি ভয়ানক ভয় পেয়েছ! গ্রীক সেনানীর চোখে ব্যাপার কি?”

 সেনানী চীৎকার ক’রে বললে, “নতুন শত্রু! নতুন শত্রু!”

 সেনাপতি কর্কশ স্বরে বললেন, “আরিষ্টোন্‌টেস্, আমি অন্ধ নই! হিন্দু বর্বররা যে নতুন সৈন্যদল নিয়ে আমাদের বাধা দিচ্ছে, সেটা আমি দেখতেই পাচ্ছি!”

১০৬