পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

দায়ী সিসিকোটাস্! কেন তুমি পোরাসের গতিবিধির উপরে দৃষ্টি রাখবার জন্যে গুপ্তচর নিযুক্ত ক’রে আসোনি?”

 শশীগুপ্ত বললেন, “সেনাপতি, আমার গুপ্তচর আছে অসংখ্য! কিন্তু মহারাজা পুরু যদি তাদেরও চেয়ে চতুর ও দ্রুতগামী হন, তাহ’লে আমি কি করতে পারি বলুন?”

 সেনানী আরিষ্টোনটেস্ ব্যাকুল স্বরে বললে, “সেনাপতি, আমাদের সামনের সৈন্যরাও পালিয়ে যাচ্ছে যে!”

 সেনাপতি শূন্যে তরবারি তুলে উচ্চকণ্ঠে বললেন, “দাড়াও, দাঁড়াও গ্রীক সৈন্যগণ! শৃগালের ভয়ে সিংহ কোনদিন পালিয়ে যায় না! ভুলে যেওনা, তোমরা গ্রীক! যদি মরতে হয়, গ্রীকদের মতন লড়তে লড়তেই প্রাণ দাও!”

 শশীগুপ্ত বললেন, “কেউ আর আপনার কথা শুনবে না সেনাপতি, বৃথাই চীৎকার করছেন! আসুন, আমরাও রণক্ষেত্র ত্যাগ করি।”

 ভীষণ গর্জন ক’রে গ্রীক-সেনাপতি বললেন, “স্তব্ধ হও! আমি তোমার মতন দেশদ্রোহী দুরাত্মা নই, তুচ্ছ প্রাণের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে গ্রীসের নাম কলঙ্কিত করবো না!”

 নীরস হাসি হেসে শশীগুপ্ত বললেন, “তাহ’লে আপনি তাড়াতাড়ি স্বর্গে যাবার চেষ্টা করুন, কিন্তু আমি আরো কিছুদিন পৃথিবীর সুখ ভোগ করতে চাই”—এই ব’লেই তিনি ঘোড়া ছুটিয়ে অন্যান্য পলাতকদের দলের ভিতরে মিলিয়ে গেলেন!

 আর গ্রীক সেনাপতি? তিনি সদর্পে, উন্নত শিরে, অটলভাবে অশ্বচালনা করলেন চন্দ্রগুপ্তের পতাকার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে।

 সূর্য তখন নেমে গিয়েছে দিকচক্রবাল-রেখার নীচে। তখনো আকাশ আরক্ত এবং তেমনি আরক্ত কুরুক্ষেত্রের মহাপ্রাত্তর। পলাতক গ্রীকরা এবং তাদের সঙ্গী দেশদ্রোহী ভারতীয় সৈনিকরা

১০৮