পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যুদ্ধ

পালিয়েও কিন্তু আত্মরক্ষা করতে পারলে না! এদিক থেকে চন্দ্রগুপ্তের অর্ধচন্দ্র-ব্যূহের মতো, ওদিক থেকেও পুরুর অর্ধচন্দ্র ব্যূহ পরস্পরের দিকে এগিয়ে এল এবং দুই অর্ধচন্দ্রব্যূহের দুইপ্রান্ত যখন মিলিত হয়ে প্রকাণ্ড এক পূর্ণমণ্ডল রচনা করলে, তখন তার মধ্যে যেন বেড়াজালে ধরা পড়ল ভারতের অধিকাংশ শত্রু! তারপরে আরম্ভ হ’ল যে বিরাট হত্যাকাণ্ড, যে বীভৎস বিজয়গর্জন, যে ভয়াবহ মৃত্যু-ক্রন্দন, পৃথিবীর কোনো ভাষাই তা বর্ণনা করতে পারবে না! কুরুক্ষেত্রের প্রান্তর হয়ে উঠল যেন ছিন্ন হস্ত, ছিন্ন পদ, মুণ্ডহীন দেহ এবং দেহহীন মুণ্ডের বিপুল ডালা!

 বহুকালের বিশুষ্ক কুরুক্ষেত্রের তৃষ্ণার্ত বুক আজ আবার রক্ত-সমুদ্রে অবগাহন করবার সুযোগ পেলে।

 পরদিনের জন্যে ভোজসভা প্রস্তুত রইল জেনে আসন্ন অন্ধকারে শকুনির দল বাসার দিকে ফিরে গেল!

 মৃত্যু-আহত দিনের ম্লান শেষ-আলোকে মৌর্য রাজবংশের ময়ূর-চিহ্নিত পতাকা বিজয়-পুলকে যেন জীবন্ত হয়ে উঠল।

 পতাকার তলায় চাণক্যের চরণে নত হয়ে প্রণাম করলেন যুবক চন্দ্রগুপ্ত!

 চাণক্য প্রসন্নমুখে আশীর্বাদ ক’রে বললেন, “বৎস, এ যুদ্ধ চরম যুদ্ধ! নদীর মতো আজ তুমি পাহাড় কেটে বাইরে বেরুলে, এখনো দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে বটে, কিন্তু আর কেউ তোমাকে বাধা দিতে পারবে না। অদূর ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টিপাত ক’রে আজ আমি স্পষ্ট দেখছি, ভারতসাম্রাজ্যের একমাত্র সম্রাট চন্দ্রগুপ্তকে!”

১৩
১০৯