মিনিট পাঁচেক ধরে দুই তরবারির ঝঞ্ঝনা-সঙ্গীতে বনপথ ধ্বনিত হ’তে লাগল। শশীগুপ্তের হস্ত ছিল সমধিক কৌশলী, কিন্তু সুবন্ধুর পক্ষে ছিল নবীন যৌবনের ক্ষিপ্রতা।
যুদ্ধের শেষ ফল কি হ’ত বলা যায় না, কিন্তু এমন সময়ে হঠাৎ এক অদ্ভুত অঘটন ঘটল।
একবার সুবন্ধুর আকস্মিক আক্রমণ এড়াবার জন্যে শশীগুপ্ত এক লাফ পিছিয়ে তাঁর ভূপতিত ঘোড়ার দেহের উপরে গিয়ে পড়লেন।
ঘোড়াটা মরেনি, তখনো মৃত্যু-যন্ত্রণায় প্রবল বেগে চার পা ছুঁড়ে বিষম ছট্ফট্ করছিল। তার এক পদাঘাতে শশীগুপ্তের দেহ হ’ল পপাত-ধরণীতলে এবং আর এক প্রচণ্ড পদাঘাতে তাঁর দেহ ছিটকে গিয়ে পড়ল ছয়-সাত হাত তফাতে।
সুবন্ধু হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। কিন্তু শশীগুপ্তের দেহ নিস্পন্দ হয়ে সমান প’ড়ে রইল দেখে সে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল।
সবিস্ময়ে স্তম্ভিত নেত্রে প্রায়-অন্ধকারে মুখ নামিয়ে দেখলে, অশ্বের পদাঘাতে শশীগুপ্তের মাথার খুলি ফেটে হু-হু ক’রে রক্ত বেরুচ্ছে, সে কলঙ্কিত দেহে প্রাণের কোনো চিহ্নই বর্তমান নেই।
অল্পক্ষণ শণীগুপ্তের মৃতদেহের দিকে নীরবে তাকিয়ে থেকে সুবন্ধু ধীরে ধীরে বললে, “শশীগুপ্ত, তোমার আত্মা যদি এখানে হাজির থাকে তাহ’লে শুনে রাখো! তুমি দেশদ্রোহী কাপুরুষ! তোমার অদৃষ্টে বীরের মৃত্যু লেখা নেই! মানুষ হয়েও তুমি পশুজীবন-যাপন করতে, তাই মরলেও আজ পশুর পদাঘাতে আর আজ রাত্রে তোমার দেহেরও সৎকার করবে বনের হিংস্র পশুরা এসে! চমৎকার!”
অরণ্যের সান্ধ্য অন্ধকার ভেদ ক’রে বহুদূর থেকে ভেসে এল মৌর্য শিবিরের উৎসব-কোলাহল! সেই উৎসবে যোগ দেবার জন্যে সুবন্ধু তাড়াতাড়ি রাজার ঘোড়ার পিঠের উপরে চ’ড়ে বসল!
১১৩