পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

অধিকারী। সেই দাবি নিয়ে তিনিও আবার খৃঃ-পূঃ ৩০৫ অব্দে ভারত আক্রমণ করতে এলেন।

 কিন্তু আলেকজাণ্ডারের অনুকরণ করতে গিয়ে সেলিউকস্ একটা মস্ত ভুল ক’রে বসলেন। আলেকজাণ্ডার যখন আসেন, উত্তর-ভারত ছিল তখন পরস্পরবিরোধী ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত, কোনো যথার্থ বড় রাজার সঙ্গে তাঁকে শক্তি-পরীক্ষা করতে হয় নি। এবং আগেই বলেছি, তিনিও শক্তিশালী মগধ রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ না ক’রেই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিলেন।

 কিন্তু সেলিউকসের আবির্ভাবের সময়ে চন্দ্রগুপ্ত কেবল মগধের অধিপতি নন, তিনি সমগ্র উত্তর-ভারত বিজয়ী এবং তাঁর অধীনে প্রস্তুত হয়ে আছে ত্রিশ হাজার অশ্বারোহী, নয় হাজার গজারোহী ও ছয়লক্ষ পদাতিক সৈন্য! এর সামনে পড়লে স্বয়ং আলেকজাণ্ডারই যে দুরবস্থায় পড়তেন, সেটা অনুমান করা কঠিন নয়!

 ভারতে আবার যবন এসেছে শুনেই জাগ্রত সিংহের মতো চন্দ্রগুপ্ত ছুটে গেলেন পঞ্চনদের তীরে। ভারত-সৈন্য বন্যার মতো ভেঙে পড়ল পররাজ্যলোভী গ্রীকদের উপরে এবং ভাসিয়ে নিয়ে গেল তাদের খড়কুটোর মতন! সিন্ধুনদের কাছে এই মহাযুদ্ধ হয়। গ্রীক ঐতিহাসিকরা আলেকজাণ্ডারের ছোট ছোট যুদ্ধেরও বড় বড় বর্ণনা রেখে গেছেন! কিন্তু এত-বড় যুদ্ধের কোনো বর্ণনাই গ্রীক ইতিহাসে পাওয়া যায় না! কারণ এ যুদ্ধ যে তাঁদের নিজেদের পরাজয়-কাহিনী! তাঁরা কেবলমাত্র স্বীকার করেছেন, চন্দ্রগুপ্তের কাছে পরাজিত হয়ে গ্রীক সেনাপতি সন্ধি স্থাপন করেন।

 সেলিউকসের চোখ ফুটল। তাড়াতাড়ি হার মেনে তিনি নিজের সাম্রাজ্য থেকে আফগানিস্থান ও বেলুচিস্থানকে চন্দ্রগুপ্তের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হ’লেন ক্ষতিপূরণস্বরূপ। ভারত-সম্রাটের মন ঠাণ্ডা রাখবার জন্যে তাঁর সঙ্গে নিজের মেয়েরও বিবাহ

১১৬