পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চণদে জাগ্রত ভারত

দিলেন। এবং চন্দ্রগুপ্ত খুসি হয়ে শ্বশুরকে উপহার দিলেন পাঁচ শত হাতী।

 গ্রীকরা ভারত থেকে বিদায় হ’ল। পঞ্চনদের তীর নিষ্কণ্টক।

 চন্দ্রগুপ্ত যখন গ্রীকদের বিরুদ্ধে প্রথম অস্ত্রধারণ করেন তখন তাঁর বয়স পঁচিশ বৎসরের বেশী নয়। তারপর মাত্র আঠারো বৎসরের মধ্যে তিনি পঞ্চনদের তীর থেকে যবন প্রভুত্বের সমস্ত চিহ্ন মুছে দেন, প্রায় সমগ্র ভারতব্যাপী অখণ্ড এক সাম্রাজ্য স্থাপন করেন এবং দিগ্বিজয়ী সেলিউসকে বাধ্য করেন মাথা নামিয়ে হার মানতে। সেই সুদূর অতীতেই তিনি প্রমাণিত করেন, য়ুরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বিশ্বজয়ী গ্রীকরাও ভারতীয় হিন্দু বীরদের সমকক্ষ নয়।

 চন্দ্রগুপ্তের জীবনের একমাত্র ব্রত ছিল, বিধর্মীদের কবল থেকে আর্যাবর্তকে উদ্ধার ক’রে তার পূর্ব-গৌরব ফিরিয়ে আনা।

 এ ব্রত যখন উদ্‌যাপিত হ’ল, তখন সিংহাসন আর তাঁর ভালো লাগল না। সেলিউকসের দূত মেগাস্থেনেস্ স্বচক্ষে দেখে চন্দ্রগুপ্তের বৃহৎ সুশাসিত সাম্রাজ্যের যে উজ্জ্বল ও সুদীর্ঘ বর্ণনা ক’রে গেছেন, আজও তা পাওয়া যায়। কিন্তু এই প্রভুত্বের ও ঐশ্বর্যের বাঁধনও আর তাঁকে বেঁধে রাখতে পারলে না। সেলিউকসের দর্পচূর্ণ করবার পর ছয় বৎসর মাত্র তিনি রাজত্ব করেছিলেন। তারপর পুত্র বিন্দুসারের হাতে রাজ্যভার দিয়ে তিনি যখন জৈন সন্ন্যাসী রূপে মুকুট খুলে চ’লে যান, তখনও তাঁর বয়স পঞ্চাশ পার হয় নি! ভারতের মতো রাজ-তপস্বীর দেশেই এমন স্বার্থত্যাগ সম্ভবপর! পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট ও রাজর্ষি অশোকও তাঁর যোগ্য পৌত্র!

 জৈন পুরাণের মত ইতিহাস মেনে নিয়েছে। গ্রীক-বিজেতা ও ভারতের স্বাধীন হিন্দু-সাম্রাজ্যের স্রষ্টা চন্দ্রগুপ্ত সন্ন্যাস গ্রহণ

১৪
১১৭