পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকহাস্য

অনিবার্য পরাভব, স্থৈর্যের এরূপ সম্যক্‌ বিচ্যুতি, মনস্বী জীবের পক্ষে লজ্জাজনক সন্দেহ নাই।’

 ক্ষিতি একটু ভাবিয়া কহিল, ‘সে কথা সত্য। কোনো অখ্যাতনামা কবি-বিরচিত এই কবিতাটি বোধ হয় জানা আছে—

তৃষার্ত হইয়া চাহিলাম এক ঘটি জল৷
তাড়াতাড়ি এনে দিলে আধখানা বেল॥

 ‘তৃষার্ত্ত ব্যক্তি যখন এক ঘটি জল চাহিতেছে তখন অত্যন্ত তাড়াতাড়ি করিয়া আধখানা বেল আনিয়া দিলে অপরাপর ব্যক্তির তাহাতে আমোদ অনুভব করিবার কোনো ধর্মসংগত অথবা যুক্তিসংগত কারণ দেখা যায় না। তৃষিত ব্যক্তির প্রার্থনা-মতে তাহাকে এক ঘটি জল আনিয়া দিলে সমবেদনাবৃত্তিপ্রভাবে আমরা মুখ পাই; কিন্তু তাহাকে হঠাৎ আধখানা বেল আনিয়া দিলে, জানি না কী বৃত্তি-প্রভাবে, আমাদের প্রচুর কৌতুক বোধ হয়। এই মুখ এবং কৌতুকের মধ্যে যখন শ্রেণীগত প্রভেদ আছে তখন দুইয়ের ভিন্নবিধ প্রকাশ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রকৃতির গৃহিণীপনাই এইরূপ—কোথাও বা অনাবশ্যক অপব্যয়, কোথাও অত্যবশ্যকের বেলায় টানাটানি। এক হাসির দ্বারা সুখ এবং কৌতুক দুটোকে সারিয়া দেওয়া উচিত হয় নাই।’

 ব্যোম কহিল, ‘প্রকৃতির প্রতি অন্যায় অপবাদ আরোপ হইতেছে। সুখে আমরা স্মিতহাস্য হাসি, কৌতুকে আমরা উচ্চহাস্য হাসিয়া উঠি। ভৌতিক জগতে আলোক এবং বজ্র ইহার তুলনা। একটা আন্দোলনজনিত, স্থায়ী; অপরটি সংঘর্ষজনিত, আকস্মিক। আমি বোধ করি, যে কারণভেদে একই ঈথরে আলোক ও বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তাহা আবিষ্কৃত হইলে তাহার তুলনায় আমাদের সুখহাস্য এবং কৌতুকহাস্যের কারণ বাহির হইয়া পড়িবে।’

১১৩