পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকহাস্যের মাত্রা

নাই, সত্যের কিয়দংশ পাইলেও আমাদের চলে। এমন কি, সত্যক্ষেত্র গভীররূপে কর্ষণ না করিয়া তাহার উপর দিয়া লঘুপদে চলিয়া যাওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।

 আর এক দিক হইতে আর এক রকমের তুলনা দিলে কথাটা পরিষ্কার হইতে পারে। রোগের সময় ডাক্তারের ঔষধ উপকারী, কিন্তু আত্মীয়ের সেবাটা বড়ো আরামের। জর্মান পণ্ডিতের কেতাবে তত্ত্বজ্ঞানের যে সকল চরম সিদ্ধান্ত আছে তাহাকে ঔষধের বটিকা বলিতে পার, কিন্তু মানসিক শুশ্রূষা তাহার মধ্যে নাই। পাঞ্চভৌতিক সভায় আমরা যে ভাবে সত্যালোচনা করিয়া থাকি তাহাকে রোগের চিকিৎসা বলা না যাক, তাহাকে রোগীর শুশ্রূষা বলা যাইতে পারে।

 আর অধিক তুলনা প্রয়োগ করিব না। মোট কথা এই, সে দিন আমরা চার বুদ্ধিমানে মিলিয়া হাসি সম্বন্ধে যে সকল কথা তুলিয়াছিলাম তাহার কোনোটাই শেষ কথা নহে। যদি শেষ কথার দিকে যাইবার চেষ্টা করিতাম তাহা হইলে কথোপকথনসভার প্রধান নিয়ম লঙ্ঘন করা হইত।

 কথোপকথনসভার একটি প্রধান নিয়ম— সহজে এবং দ্রুতবেগে অগ্রসর হওয়া। অর্থাৎ মানসিক পায়চারি করা। আমাদের যদি পদতল না থাকিত, দুই পা যদি দুটো তীক্ষ্ণাগ্র শলাকার মতো হইত, তাহা হইলে মাটির ভিতর দিকে সুগভীর ভাবে প্রবেশ করার সুবিধা হইত, কিন্তু এক পা অগ্রসর হওয়া সহজ হইত না। কথোপকথন-সমাজে আমরা যদি প্রত্যেক কথার অংশকে শেষ পর্যন্ত তলাইবার চেষ্টা করিতাম তাহা হইলে একটা জায়গাতেই এমন নিরুপায় ভাবে বিদ্ধ হইয়া পড়া যাইত যে, আর চলাফেরার উপায় থাকিত না। এক-এক বার এমন অবস্থা হয়, চলিতে চলিতে হঠাৎ কাদার মধ্যে গিয়া পড়ি; সেখানে যেখানেই পা ফেলি হাঁটু পর্যন্ত বসিয়া যায়, চলা দায় হইয়া উঠে। এমন সকল বিষয়

১২০