পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

বৈজ্ঞানিক কৌতূহল

 আমি কহিলাম, ‘তাহার কারণ এই যে, নিয়ম অনন্ত কাল ও অনন্ত দেশে প্রসারিত হইলেও তাহা সীমাবদ্ধ, সে আপন চিহ্নিত রেখা হইতে অণুপরিমাণ ইতস্তত করিতে পারে না— সেই জন্যই তাহার নাম নিয়ম এবং সেই জন্যই মানুষের কল্পনাকে সে পীড়া দেয়। শাস্ত্রসংগত চিকিৎসার কাছে আমরা অধিক আশা করিতে পারি না— এমন রোগ আছে যাহা চিকিৎসার অসাধ্য। কিন্তু এ পর্যন্ত হাতযশ-নামক একটা রহস্যময় ব্যাপারের ঠিক সীমানির্ণয় হয় নাই; এই জন্য সে আমাদের আশাকে কল্পনাকে কোথাও কঠিন বাধা দেয় না। এই জন্যই ডাক্তারি ঔষধের চেয়ে অবধৌতিক ঔষধের আকর্ষণ অধিক। তাহার ফল যে কত দূর পর্যন্ত হইতে পারে তৎসম্বন্ধে আমাদের প্রত্যাশা সীমাবদ্ধ নহে। মানুষের যত অভিজ্ঞতাবৃদ্ধি হইতে থাকে, অমোঘ নিয়মের লৌহপ্রাচীরে যতই সে আঘাত প্রাপ্ত হয়, ততই মানুষ নিজের স্বাভাবিক অনন্ত আশাকে সীমাবদ্ধ করিয়া আনে, কৌতূহলবৃত্তির স্বাভাবিক নূতনত্বের আকাঙ্ক্ষা সংযত করিয়া আনে, নিয়মকে রাজপদে প্রতিষ্ঠিত করে, এবং প্রথমে অনিচ্ছাক্রমে পরে অভ্যাসক্রমে তাহার প্রতি একটা রাজভক্তির উদ্রেক করিয়া তোলে।’

 ব্যোম কহিল, ‘কিন্তু সে ভক্তি যথার্থ অন্তরের ভক্তি নহে, তাহা কাজ আদায়ের ভক্তি। যখন নিতান্ত নিশ্চয় জানা যায় যে জগৎকার্য অপরিবর্তনীয় নিয়মে বদ্ধ, তখন কাজেই পেটের দায়ে, প্রাণের দায়ে, তাহার নিকট ঘাড় হেঁট করিতে হয়। তখন বিজ্ঞানের বাহিরে অনিশ্চয়ের হস্তে আত্মসমর্পণ করিতে সাহস হয় না; তখন মাদুলি তাগা জল পড়া প্রভৃতিকে গ্রহণ করিতে হইলে ইলেক্‌ট্রিসিটি ম্যাগ্রেটিজ্‌ম্‌ হিপ্‌নটিজম্‌ প্রভৃতি বিজ্ঞানের জাল মার্ক দেখিয়া আপনাকে ভুলাইতে হয়। আমরা নিয়ম অপেক্ষা অনিয়মকে যে ভালোবাসি তাহার একটা গোড়ার কারণ

১৪৯