পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

বৈজ্ঞানিক কৌতূহল

অন্তরতম স্থানে তাহাকে প্রতিষ্ঠিত না জানিলে আমাদের অন্তরতম প্রকৃতির প্রতি ব্যভিচার করা হয়। আমার মধ্যে সমস্ত বিশ্বনিয়মের যে একটি ব্যতিক্রম আছে জগতে কোথাও তাহার একটা মূল আদর্শ নাই, ইহা আমাদের অন্তরাত্মা স্বীকার করিতে চাহে না। এই জন্য আমাদের ইচ্ছা একটা বিশ্ব-ইচ্ছার, আমাদের প্রেম একটা বিশ্বপ্রেমের নিগূঢ় অপেক্ষ না রাখিয়া বাঁচিতে পারে না।’

 সমীর কহিল, জড়প্রকৃতির সর্বত্রই নিয়মের প্রাচীর চীনদেশের প্রাচীরের অপেক্ষা দৃঢ় প্রশস্ত ও অভ্রভেদী, হঠাৎ মানবপ্রকৃতির মধ্যে একটা ক্ষুদ্র ছিদ্র বাহির হইয়াছে। সেইখানে চক্ষু দিয়াই আমরা এক আশ্চর্য আবিষ্কার করিয়াছি। দেখিয়াছি প্রাচীরের পরপারে এক অনন্ত অনিয়ম রহিয়াছে; এই ছিদ্রপথে তাহার সহিত আমাদের যোগ; সেইখান হইতেই সমস্ত সৌন্দর্য স্বাধীনতা প্রেম আনন্দ প্রবাহিত হইয়া আসিতেছে। সেই জন্য এই সৌন্দর্য ও প্রেমকে কোনো বিজ্ঞানের নিয়মে বাঁধিতে পারিল না।’


 এমন সময়ে স্রোতস্বিনী গৃহে প্রবেশ করিয়া সমীরকে কহিল, ‘সে দিন দীপ্তির পিয়ানো বাজাইবার স্বরলিপি-বইখানা তোমরা এত করিয়া খুঁজিতেছিলে, সেটার কী দশা হইয়াছে জান?’

 সমীর কহিল, ‘না।’

 স্রোতস্বিনী কহিল, ‘রাত্রে ইঁদুরে তাহা কুটি কুটি করিয়া কাটিয়া পিয়ানোর তারের মধ্যে ছড়াইয়া রাখিয়াছে। এরূপ অনাবশ্যক ক্ষতি করিবার তো কোনো উদ্দেশ্য খুঁজিয়া পাওয়া যায় না।’

 সমীর কহিল, ‘উক্ত ইন্দুরটি বোধ করি ইন্দুরবংশে একটি বিশেষক্ষমতাসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক। বিস্তর গবেষণায় সে বাজনার বহির সহিত

১৫১