পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।



সৌন্দর্যের সম্বন্ধ


 বর্ষায় নদী ছাপিয়া খেতের মধ্যে জল প্রবেশ করিয়াছে। আমাদের বোট অর্ধমগ্ন ধানের উপর দিয়া সর্‌ সর্‌ শব্দ করিতে করিতে চলিয়াছে।

 অদূরে উচ্চভূমিতে একটা প্রাচীরবেষ্টিত একতালা কোঠাবাড়ি এবং দুই-চারিটি টিনের ছাদ-বিশিষ্ট কুটির, কলা কাঁঠাল আমি বাঁশঝাড় এবং বৃহৎ বাঁধানো অশথ গাছের মধ্য দিয়া দেখা যাইতেছে।

 সেখান হইতে একটা সরু সুরের সানাই এবং গোটাকতক ঢাক ঢোলের শব্দ শোনা গেল। সানাই অত্যন্ত বেসুরে একটা মেঠো রাগিণীর আরম্ভ-অংশ বারম্বার ফিরিয়া ফিরিয়া নিষ্ঠুর ভাবে বাজাইতেছে এবং ঢাক-ঢোলগুলা যেন অকস্মাৎ বিনা কারণে খেপিয়া উঠিয়া বায়ুরাজ্য লণ্ডভও করিতে উদ্যত হইয়াছে।

 স্রোতস্বিনী মনে করিল, নিকটে কোথাও বুঝি একটা বিবাহ আছে। একান্ত কৌতূহল-ভরে বাতায়ন হইতে মুখ বাহির করিয়া, তরুসমাচ্ছন্ন তীরের দিকে উৎসুক দৃষ্টি চালনা করিল।

 আমি ঘাটে বাঁধা নৌকার মাঝিকে জিজ্ঞাসা করিলাম, কী রে, বাজনা কিসের।'

 সে কহিল, আজ জমিদারের পুণ্যাহ।

 পুণ্যাহ বলিতে বিবাহ বুঝায় না শুনিয়া স্রোতস্বিনী কিছু ক্ষুণ্ণ হইল। সে ঐ তরুচ্ছায়াঘন গ্রাম্য পথটার মধ্যে কোনো এক জায়গায় ময়ূরপংখিতে একটি চন্দনচর্চিত অজাতশ্মশ্রু নববর অথবা লজ্জামণ্ডিতা রক্তাম্বরা নববধুকে দেখিবার প্রত্যাশা করিয়াছিল।

 আমি কহিলাম, ‘পুণ্যাহ অর্থে জমিদারি বৎসরের আরম্ভ-দিন। আজ প্রজারা যাহার যেমন ইচ্ছা কিছু কিছু খাজনা লইয়া কাছারি-ঘরে টোপর-পরা বরবেশধারী নায়েবের সম্মুখে আনিয়া উপস্থিত করিবে।

১৪