পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

অখণ্ডতা

 ব্যোম অধীরের মতো হইয়া হঠাৎ আরম্ভ করিয়া দিল, ‘তুমি যাহাকে ঐক্য বলিতেছ আমি তাহাকে আত্মা বলি, তাহার ধর্মই এই, সে পাঁচটা বস্তুকে আপনার চারি দিকে টানিয়া আনিয়া একটা গঠন দিয়া গড়িয়া তোলে। আর যাহাকে মন বলিতেছ সে পাঁচটা বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হইয়া আপনাকে এবং তাহাদিগকে ভাঙিয়া ভাঙিয়া ফেলে। সেই জন্য আত্মযোগের প্রধান সোপান হইতেছে মনটাকে অবরুদ্ধ করা।

 ‘ইংরাজের সহিত সমীর মনের যে তুলনা করিয়াছেন এখানেও খাটে। ইংরাজ সকল জিনিসকেই অগ্রসর হইয়া তাড়াইয়া খেদাইয়া ধরে। তাহার ‘আশাবধিং কো গতঃ’, শুনিয়াছি সূর্যদেবও নহেন— তিনি তাহার রাজ্যে উদয় হইয়া এ পর্যন্ত অস্ত হইতে পারিলেন না। আর আমরা আত্মার ন্যায় কেন্দ্রগত হইয়া আছি; কিছু হরণ করিতে চাহি না, চতুর্দিকে যাহা আছে তাহাকে ঘনিষ্ঠ ভাবে আকৃষ্ট করিয়া গঠন করিয়া তুলিতে চাই। এই জন্য আমাদের সমাজের মধ্যে, গৃহের মধ্যে, ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার মধ্যে, এমন একটা রচনার নিবিড়তা দেখিতে পাওয়া যায়। আহরণ করে মন, আর সৃজন করে আত্মা।

 ‘যোগের সকল তথ্য জানি না; কিন্তু শুনা যায়, যোগবলে যোগীরা সৃষ্টি করিতে পারিতেন। প্রতিভার সৃষ্টিও সেইরূপ। কবিরা সহজ ক্ষমতা-বলে মনটাকে নিরস্ত করিয়া দিয়া অর্ধ-অচেতন ভাবে যেন একটা আত্মার আকর্ষণে ভাব রস দৃশ্য বর্ণ ধ্বনি কেমন করিয়া সঞ্চিত করিয়া, পুঞ্জিত করিয়া, জীবনে সুগঠনে মণ্ডিত করিয়া খাড়া করিয়া তুলেন।

 ‘বড়ো বড়ো লোকেরা যে বড়ো বড়ো কাজ করেন, সেও এই ভাবে। যেখানকার যেটি সে যেন একটি দৈবশক্তি-প্রভাবে আকৃষ্ট হইয়া রেখায় রেখায় বর্ণে বর্ণে মিলিয়া যায়, একটি সুসম্পন্ন সুসম্পূর্ণ কার্যরূপে দাঁড়াইয়া যায়। প্রকৃতির সর্বকনিষ্ঠজাত মন-নামক দুরন্ত বালকটি যে একেবারে

৭৮