পাতা:পত্রপুট-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৩৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২২
পত্রপুট

তার স্পষ্ট আলোয় বিগত বসন্ত রাত্রের বিহ্বলতা
সে দিয়েছে ঘুচিয়ে।
নির্বিশেষে ছড়িয়ে পড়ল আলো মাঠেবাটে,
মহাজনের টিনের ছাদে,
শাক্‌সব্‌জীর ঝুড়ি চুপড়িতে,
আঁটিবাঁধা খড়ে,
হাঁড়ি মালসার স্তূপে,
নতুন গুড়ের কলসীর গায়ে।
সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দিল
মহানীম গাছের ফুলের মঞ্জরীতে॥
পথের ধারে তালের গুঁড়ি আঁকড়ে উঠেছে অশথ,
অন্ধ বৈরাগী তারি ছায়ায় গান গাইছে হাঁড়ি বাজিয়ে—


 —কাল আসব ব’লে চলে গেল
আমি যে সেই কালের দিকে তাকিয়ে আছি।—


কেনাবেচার বিচিত্র গােলমালের জমিনে
ঐ সুরের শিল্পে বুনে উঠছে
যেন সমস্ত বিশ্বের একটা উৎকণ্ঠার মন্ত্র—
“তাকিয়ে আছি।”
একজোড়া মােষ উদাস চোখ মেলে
বয়ে চলেছে বােঝাই গাড়ি,
গলায় বাজছে ঘণ্টা,
চাকার পাকে পাকে টেনে তুলছে কাতর ধ্বনি।
আকাশের আলােয় আজ যেন মেঠো বাঁশির সুর মেলে-দেওয়া।
সব জড়িয়ে মন ভুলেছে।
বেদমন্ত্রের ছন্দে
আবার মন বললে—
মধুময় এই পার্থিব ধুলি।