পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঘুমোয়। নিজের খাবারের অংশ থেকে সে খাবার বাঁচিয়ে বেরালকে খাওয়ায় আর আমাদের কাছ থেকে দুধ চেয়ে নিয়ে বেরালছানাকে দুধ খাওয়ায়। আর সে যখন একবার তু বলে ডাক দেয় রাজ্যের বেরাল তার কাছে ছুটে আসে। ইতি বেরাল কাহিনী সমাপ্ত।

 আমাদের গৃহস্থালী নেহাৎ ছোট নয়। পরিবারের সংখ্যা ৯ জন। তবে বলা বাহুল্য যে সকলেই পুরুষ। চাকরটাকর নিয়ে মোট ২০ জনের বেশী বই কম নয়। জেলের মধ্যে আর একটি ক্ষুদ্র জেলে আমরা বাস করি। এখানকার লোকেরা কি বাবু কি চাকর—জেলের অন্যান্য কয়েদীদের সঙ্গে মিশতে পায় না। আমাদের সংসারের মধ্যে বাবুর্চী, মশালচী, মেথর, ঝাড়ুদার ইত্যাদি সবরকম লোক আছে। বসতবাটী ছাড়া এই ক্ষুদ্র জেলের মধ্যে রান্নাঘর,পুখুর, খেলবার জন্য টেনিস কোর্ট প্রভৃতি আছে। স্নানের ঘর গত ৬ মাস ধরে তৈয়ারী হচ্ছে। কবে তৈয়ারী শেষ হবে তা শ্রীভগবান ভিন্ন আর কেউ বোধ হয় বলতে পারে না।

 বুঝতেই পারছেন যে এই বৃহৎ সংসারে সকলেই কয়েদী—কেহ দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদী আর কেহ আমার মত বিনাবিচারে সরকারের হুকুমে কয়েদী। আপনারা চোর-ডাকাতের নাম শুনে বোধ হয় নাক সিঁটকোবেন, কিন্তু এখন জেলের কয়েদীদের উপর আমার আর ঘৃণার ভাব নাই। এদের মধ্যে অনেকেই বিপদে পড়ে অথবা বাধ্য হয়ে অন্যায় করে এবং অনেকেই বিনা অপরাধে দণ্ডিত হয়। তাদের মধ্যে অনেকেরই হৃদয় আছে এবং ভাল অবস্থায় পড়লে তারা যে ভাল হতে পারে এ বিষয়ে আমার কোনও সন্দেহ নাই।

 শাস্ত্রে বলে —“গৃহিণী গৃহং উচ্যতে” অর্থাৎ গৃহিণী না থাকলে গৃহ নাকি গৃহই নয়। আমাদের এখানে গৃহ আছে কিন্তু গৃহিণী নাই। গৃহিণীর অভাবে আমাদের একজন ম্যানেজার বাবু নিযুক্ত করা হয়েছে—বলা বাহুল্য যে ম্যানেজার বাবু আমাদের মত একজন বিনা বিচারে কয়েদী। তিনি হিসাবপত্র রাখেন; দৈনিক বাজারের ফর্দ্দ তৈয়ারী করে দেন এবং গৃহস্থালীর কাজ সম্বন্ধে তিনি সর্ব্বেসর্ব্বা,

১৫৬