পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রাজপথ তেমনি জনহীন নীরব, কেমন একপ্রকার উদ্বিগ্ন আশঙ্কায় অপূর্ব্বর মনের ভিতরটা যেন ভার হইয়া উঠিল।

 হঠাৎ সুমিত্রার কণ্ঠ ধ্বনিত হইয়া উঠিল, অপূর্ব্ববাবু!

 অপূর্ব্ব চকিত হইয়া মুখ তুলিয়া চাহিল।

 সুমিত্রা কহিলেন, আপনি আমাদের চেনেন না, কিন্তু ভারতীর কাছ থেকে আমরা সবাই আপনাকে চিনি। শুনলাম আপনি আমাদের সমিতির মেম্বার হতে চান। সত্য?

 অপূর্ব্ব না বলিতে পারিল না, ঘাড় নাড়িয়া সম্মতি জানাইল। যে লোকটি একমনে লিখিতেছিল সুমিত্রা তাহাকে লক্ষ্য করিয়া কহিলেন, ডাক্তার, অপূর্ব্ববাবুর নামটা লিখে নেবেন। অপূর্ব্বকে হাসিয়া বলিলেন, আমাদের কোনরকম চাঁদা নেই, টাকাকড়ি দিতে হয় না এইটে আমাদের সমিতির বিশেষত্ব।

 প্রত্যুত্তরে অপূর্ব্ব নিজেও একটু হাসিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু পারিল না। একটা মোটা বাঁধানো খাতায় যথার্থই তাহার নাম লেখা হইয়া গেল দেখিয়া মনে মনে সে অস্বস্তিতে ভরিয়া উঠিল। এবং চুপ করিয়া থাকিতে আর না পারিয়া বলিয়া ফেলিল, কিন্তু কি উদ্দেশ্য, কি আমাকে করতে হবে কিছুই ত জানতে পারলাম না।

 ভারতী আপনাকে জানান নি।

 অপূর্ব্ব ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া বলিল, কিছু জানিয়েচেন, কিন্তু একটা কথা আপনাকে আমি জিজ্ঞাসা করি, নবতারার আচরণ আপনারা কি সত্যই অন্যায় মনে করেন না?

 সুমিত্রা কহিলেন, অন্ততঃ আমি করিনে। কারণ, দেশের বড় আমার কাছে কিছুই নেই।

 অপূর্ব্ব শ্রদ্ধাভরে কহিল, দেশকে আমিও প্রাণ দিয়ে ভালবাসি। এবং দেশের সেবা করবার অধিকার স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই সমান, কিন্তু এদের কর্ম্মক্ষেত্র ত এক নয়। আমরা পুরুষে বাইরে এসে কাজ করব, কিন্তু নারী গৃহের মধ্যে, শুদ্ধান্তঃপুরে স্বামী-পুত্রের সেবার মধ্যে দিয়েই সার্থক হবেন। তাঁদের সত্যকার কল্যাণে দেশের যত বড় কাজ হবে বাইরে এসে পুরুষের সঙ্গে ভিড় করে দাঁড়ালে ত সে কাজ কিছুতেই হবে না।

 হুমিত্রা হাসিলেন। অপূর্ব্ব লক্ষ্য করিয়া দেখিল সকলেই যেন তাঁহার প্রতি চাহিয়া মুখ টিপিয়া হাসি গোপন করিল। সুমিত্রা কহিলেন, অপূর্ব্ববাবু, এটা অনেক দিনের এবং অনেকের মুখের কথা তা আমরা অস্বীকার করিনে। কিন্তু আপনি ত জানেন কোন একটা কথা কেবলমাত্র বহুদিন ধরে বহু লোকে বলতে

৯৬