পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১২

 কয়েক পদ অগ্রসর হইয়াই অপূর্ব্ব সৌজন্য প্রকাশ করিয়া কহিল, আপনার এই অসুস্থ দুর্ব্বল শরীর নিয়ে আর পথ হেঁটে কাজ নেই। এই ত সোজা রাস্তা বড় রাস্তায় গিয়ে পড়েচে, আমি অনায়াসে যেতে পারবো।

 ডাক্তার চলিতে চলিতেই একটু হাসিয়া বলিলেন, অনায়াসে এলেই কি অনায়াসে যেতে পারা যায় অপূর্ব্ববাবু? তখন, সন্ধ্যাবেলা যে পথটা সোজাই ছিল, এখন, এতরাত্রে জেরবাদী পাঠান আর বেকার কাফ্রিতে ছিলে হয়ত তাকে রীতিমত বাঁকিয়ে রেখেচে। চলুন আর দাঁড়াবেন না।

 অপূর্ব্ব ইঙ্গিতটা বুঝিতে পারিয়াও জিজ্ঞাসা করিল, কি করে এরা? মারামারি?

 তাহার সঙ্গী পুনশ্চ হাসিয়া বলিলেন, করে বই কি! মদের খরচা তারা পরের ঘাড়ে চাপাবার কাজে ও অনুষ্ঠানটুকু বোধ করি ঠিক বাদ দিয়ে উঠতে পারে না। এই যেমন সোনার ঘড়িটা আপনার। অপরের পকেটে চালান যাবার সময়ে আপত্তি হবারই সম্ভাবনা। তার পরের ব্যাপারটাও অত্যন্ত স্বাভাবিক। ঠিক না?

 অপূর্ব্ব সভয়ে ঘাড় নাড়িয়া কহিল, ঠিক বটে, কিন্তু এ যে আমার বাবার ঘড়ি!

 ডাক্তার বলিলেন, এই তো তারা বুঝতে চায় না! কিন্তু, আজ না বুঝলে চলবে না।

 অর্থাৎ?

 অর্থাৎ, আজ এর বদলে কারুরই মদ খাবার সুবিধে হবে না।

 অপূর্ব্ব ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া সন্দিগ্ধকণ্ঠে কহিল, বরঞ্চ চলুন, আর কোন পথ দিয়ে ঘুরে যাওয়া যাক্‌।

 ডাক্তার তাহার মুখের প্রতি চহিয়া খিল্ খিল্ করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। অনেকটা মেয়েদের মত স্নিদ্ধ সকৌতুক হাসি। কহিলেন, ঘুরে? এই দুপুর রাতে? না না, তার আবশ্যক নেই, চলুন। এই বলিয়া সেই শীর্ণ হাতখানি দিয়া অপূর্ব্বর ডান হাতটি টানিয়া লইয়া একটা চাপ দিতেই অপূর্ব্বর অনেক দিনের অনেক জিমনাস্টিক, অনেক ক্রিকেট-হকি-খেলা হাতের ভিতরের হাড়গুলা পর্য্যন্ত যেন মড়মড় করিয়া উঠিল।

 অপূর্ব্ব হাত ছাড়াইয়া লইয়া বলিল, চলুন, বুঝেচি। এই বলিয়া সে নিজেও একটু হাসিবার চেষ্টা করিয়া কহিল, কাকাবাবু সেদিন আপনার কথাতেই রহস্য করে আমাকে বলেছিলেন, সাধে কী বাবাজী মহাপুরুষের সম্বর্দ্ধনায় এত লোকজনের আয়োজন করতে হয়। আমাদের গুহ্য কেতাবে লেখা আছে, কৃপা করলে তিনি

১০০