তাহার মন্তব্য শুনিয়া ভারতী থমকিয়া দাঁড়াইল, কিন্তু তখনই ডাক্তারের চোখের দিকে চাহিয়া স্বচ্ছন্দমনে কাজে চলিয়া গেল।
ডাক্তারবাবু একখণ্ড মোমবাতি জ্বালাইয়া পকেট হইতে কয়েকখানা চিঠি বাহির করিয়া জবাব লিখিতে বসিলেন। মিনিট দশেক নীরবে অপেক্ষা করিয়া অপূর্ব্ব বিরক্ত ও উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিল। জিজ্ঞাসা করিল, চিঠিগুলো কি অত্যন্ত জরুরি?
ডাক্তার মুখ না তুলিয়া কহিলেন, হ্যাঁ।
অপূর্ব্ব বলিল, ওদিকে একটা ব্যবস্থা হওয়াও ত কম জরুরি নয়। আপনি কি তাঁর বাসায় কাউকে পাঠাবেন না?
ডাক্তার কহিলেন, এত রাত্রে? কাল সকালের পূর্ব্বে বোধ হয় আর লোক পাওয়া যাবে না।
অপূর্ব্ব বলিল, তাহলে তার জন্যে আর আপনি চিন্তিত হবেন না, সকালে আমি নিজেই যেতে পারবো। তারতীকে নিষেধ না করলে আমরা যেতে পারতাম এবং আামার মনে হয় সেইটেই সবচেয়ে ভাল হতো।
ডাক্তারের চিঠি লেখায় বাধা পড়িল না, কারণ তিনি মুখ তুলিবারও অবকাশ পাইলেন না, শুধু বলিলেন, আবশ্যক ছিল না।
অপূর্ব্ব অন্তরের উষ্মা যথাসাধ্য চাপিয়া কহিল, আবশ্যকতার ধারণা এ ক্ষেত্রে আপনার এবং আমার এক নয়। আমার সে বন্ধু।
ভারতী চায়ের সরঞ্জাম লইয়া নীচে আসিল এবং পেয়ালা দুই চা তৈরী করিয়া দিয়া কাছে বসিল। ডাক্তারের চিঠি লেখা এবং চা খাওয়া দুই কাজই একসঙ্গে চলিতে লাগিল। মিনিট দুই-তিন নিঃশব্দে কাটিবার পরে সহসা ভারতী অভিমানের সুরে বলিয়া উঠিল, আপনি সদাই ব্যস্ত। দুদণ্ড যে আপনার কাছে বসে কথা শুনবো সে সময়টুকুও আমরা পাইনে।
ডাক্তারের অন্যমনস্ক কানের মধ্যে গিয়া রমণীর এই অভিমানের সুর বাজিল, তিনি চায়ের পেয়ালা হইতে মুখ সরাইয়া হাসিমুখে কহিলেন, করি কি ভাই, এই দুটোর ট্রেনেই আবার রওনা হতে হবে।
সংবাদ শুনিয়া ভারতী চকিত হইল এবং অপূর্ব্বর মনের সংশয় তাহার বন্ধুর সম্বন্ধে একেবারে ঘনীভূত হইয়া উঠিল। ভারতী জিজ্ঞাসা করিল, একটা রাতও কি আপনি বিশ্রামের অবকাশ পাবেন না ডাক্তারবাবু?
ডাক্তার চায়ের পেয়ালা নিঃশেষ করিয়া কহিলেন, আমার শুধু একটি দিনের অবসর আছে ভাই ভারতী, সে কিন্তু আজও আসেনি।
ভারতী বুঝিতে না পারিয়া জিজ্ঞাসা করিল, সে কবে আসবে?
১৫৭