পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এড়ায় না, তুমি সকলের ভাল-মন্দই চিন্তা কর। সংসারে আমার আপনার কেউ নেই, তোমার পথের দাবী থেকে আমাকে বিদায় দিও না দাদা।

 অন্ধকারের মধ্যেই ডাক্তার বারংবার মাথা নাড়িয়া কহিলেন, ভগবানের কাজ থেকে বিদায় দেবার অধিকার কারও নেই, কিন্তু এর ধারা তোমাকে বদলে নিতে হবে।

 ভারতী কহিল, তুমিই বদলে দিয়ো।

 ডাক্তার এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না, সহসা ব্যগ্র হইয়া বলিলেন, ভারতী, আর আমার সময় নেই, আমি চললাম। এই বলিয়া অন্ধকার পথে মুহূর্ত্তে অদৃশ্য হইয়া গেলেন।


২০

 গাড়ি চলিবার উপক্রম করিতেই ভারতী অপূর্ব্বর বাসার ঠিকানা বলিয়া দিতে মুখ বাড়াইয়া কহিল, দেখো গাড়োয়ান, ত্রিশ নম্বর।

 তাহার কথা শেষ না হইতেই গাড়োয়ান বলিয়া উঠিল, আই নো।

 গাড়ির পরিসর ছোট বলিয়া দুজনে ঘেঁষাঘেষি বসিয়াছিল, গাড়োয়ানের মুখের ইংরাজী কথায় অপূর্ব্বর সমস্ত দেহ যে শিহরিয়া উঠিল ভারতী তাহা স্পষ্ট অনুভব করিল। ইহার পরে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরিয়া ঘড়র্ ঘড়র্ ছড়র্ ছড়র্ করিয়া ভাড়াটে গাড়ি চলিতেই লাগিল, কিন্তু উভয়ের মধ্যে কোন কথাই হইল না। অন্ধকার নিঃস্তব্ধ নশীথে গাড়ির চাকা ও পথের পাথরের সংঘর্ষে যে কঠোর শব্দ উঠিতে লাগিল, তাহাতে অপূর্ব্বর সর্ব্বাঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে কাঁটা দিয়া কেবলই ভয় হইতে লাগিল, পাড়ার কাহারও ঘুম ভাঙ্গিতে আর বাকি থাকিবে না এবং সহরের সমস্ত পুলিশ ছুটিয়া আসিল বলিয়া। কিন্তু কোন দুর্ঘটনা ঘটিল না, গাড়ি আসিয়া বাসার দরজায় থামিল। ভারতী ভিতর হইতে গাড়ির দরজা খুলিয়া দিয়া অপূর্ব্বকে নামিতে ইঙ্গিত করিয়া নিজেও তাহার পিছনে পিছনে নামিয়া আসিয়া মৃদুকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, কত ভাড়া?

 গাড়োয়ান একটুখানি হাসিয়া কহিল, নট এ পাই। পরক্ষণেই বার দুই মাথা নাড়িয়া বলিল, গুড নাইট টু ইউ! এই বলিয়া গাড়ি হাঁকাইয়া দিয়া সোজা বাহির হইয়া গেল।

১৮১