ভারতী বিশ্বাস রুদ্ধ করিয়া প্রশ্ন করিল, তার পরে?
ডাক্তার কহিলেন, পরের ঘটনা শুধু এইটুকুই বলতে পারি ভারতী, সুমিত্রার বিরুদ্ধে নালিশ করবার আমি আজও কোন হেতু পাইনি। যে একুশ বছরের সমস্ত সংস্কার একদিনে মুছে ফেলে আসতে পারে, তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু বড় নিষ্ঠুর।
ভারতী চুপ করিয় বসিয়া রহিল, তাহার কেবলই ইচ্ছা করিতে লাগিল জিজ্ঞাসা করে, হোক নিষ্ঠুর, কিন্তু তাঁকে তুমি কতখানি ভালবাসো? কিন্তু লজ্জার এ কথা সে কিছুতেই মুখ দিয়া উচ্চারণ করিতে পারিল না। অথচ ওই আশ্চর্য্য রমণীর গোপন অন্তরের অনেক ইতিহাসেরই আজ সে সন্ধান পাইল। তাহার নির্ম্মম মৌনতা, কঠোর ঔদাসীন্য—কিছুরই অর্থ বুঝিতে যেন আর তাহার বাকী রহিল না।
হঠাৎ একটা অতর্কিত দীর্ঘশ্বাস ভাক্তারের মুখ দিয়া বাহির হইয়া পড়ায় মুহূর্ত্তকালের জন্য তিনি লজ্জায় ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন। কিন্তু ওই মুহূর্ত্তের জন্যই। সুদীর্ঘ সাধনায় দেহ ও মনের প্রতি বিন্দুটির উপরেই অসামান্য অধিকার এতদিন তিনি বৃথাই অর্জ্জন করেন নাই। পরক্ষণেই তাঁহার শান্ত কণ্ঠ ও সহজ হাস্যমুখ ফিরিয়া আসিল, বলিলেন, তারপরে সুমিত্রাকে নিয়ে আমাকে ক্যানটনে চলে আসতে হ’ল।
ভারতী হাসি গোপন করিয়া ভালমানুষের মত মুখ করিয়া কহিল, চলে না-ই আসতে দাদা, কে তোমাকে মাথার দিব্যি দিয়েছিল বল? আমরা ত কেউ দিইনি।
ডাক্তার হাসিমুখে ক্ষণকাল নীরব হইয়া থাকিয়া বলিলেন, মাথার দিব্যি যে ছিল না তা নয়, কিন্তু ভেবেছিলাম সে-কথা আর কেউ জানবে না, কিন্তু, তোমাদের দোষ এই যে শেষ পর্য্যন্ত না শুনলে আর কৌতূহল মেটে না। আবার না বললে এমন সব কথা অনুমান করতে থাকবে যে তার চেয়ে বরঞ্চ বলাই ভাল।
ভারতী কহিল, আমিও তাই বলচি দাদা। ঐটুকু তুমি বলে ফেল।
ডাক্তার কহিলেন, ব্যাপারটা এই যে সুমিত্রা আমার হোটেলেই একটা দোতলার ঘর ভাড়া নিলে। আমি অনেক নিষেধ করলাম, কিন্তু কিছুতেই শুনলে না। যখন বললাম, আমাকে তাহলে অন্যত্র যেতে হবে, তখন তার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। বললে, আমাকে আপনি আশ্রয় দিন। পরদিনই ব্যাপারটা বোঝা গেল। সেই দাউদের দল দেখা দিলেন। জন-দশেক লোক, একজন অর্দ্ধেক আরবি, অর্দ্ধেক নিগ্রো ছোটখাটো একটা হাতীর মত, অনায়াসে সুমিত্রাকে স্ত্রী বলে দাবী করে বসলো।
ভারতী কহিল, আবার তোমারই সাক্ষাতে! তোমাদের দুজনের বোধ করি খুব ঝগড়া বেঁধে গেল?
২০৬