পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তোমাকে দেখতে পাইনি, দাদা। আমি নিশ্চয় তোমার সঙ্গে চীনদের দেশে চলে যাবো তা বলে রাখচি।

 ডাক্তার সহাস্যে কহিলেন, আমিও বলে রাখচি তুমি নিশ্চয়ই ওরকম কিছু করবার চেষ্টা করবে না। এই বলিয়া তিনি ভাঁটার টানে নৌকা ছাড়িয়া দিলেন। বলিলেন, এইটুকু ত বেশ যাওয়া যাবে, কিন্তু বড় নদীতে পড়ে উল্টো স্রোত ঠেলে পৌঁছতে আজ আমাদের ঢের দেরি হবে।

 ভারতী কহিল, হলই বা! এমনি কি শুভকর্ম্মে যোগ দিতে চলেচ যে সময় বয়ে গেলে ক্ষতি হবে? আমার ত যাবার ইচ্ছেই ছিল না, শুধু তুমি যাচ্চো বলেই যাওয়া। কি বিশ্রী নোঙরা কাণ্ড বল ত!

 ডাক্তার ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া বলিলেন, শশীর নবতারার সঙ্গে বিয়ে অনেকের সংস্কারে বাধে, হয়ত বা দেশের আইনেও বাধে। কিন্তু সে দোষ ত শশীর নয়, আইন করা না করার জন্য দায়ী যারা, অপরাধ তাদের। আমার একমাত্র ক্ষোভ শশী আর কাউকে যদি ভালবাসতো ভারতী।

 ভারতী হাসিয়া ফেলিয়া বলিল, শশীবাবু না-হয় আর কাউকে ভালবাসলেন, কিন্তু সে বাসবে কেন? ওর মত মানুষকে সজ্ঞানে কোন মেয়েমানুষ ভালবাসতে পারে এ তো আমি ভাবতেই পারিনি। আচ্ছা তুমিই বল, পারে দাদা?

 ডাক্তার মুচকিয়া হাসিলেন, বলিলেন, ওকে ভালবাসা শক্ত বই কি। তাই ত রয়ে গেলাম তাকে আশীর্ব্বাদ করব বলে। মনে সত্যকার শুভকামনার যদি কোন শক্তি থাকে শশী যেন তার ফল পায়।

 তাঁর কণ্ঠস্বরের আকস্মিক গভীরতায় ভারতী অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, শশীবাবুকে তুমি বাস্তবিক ভালোবাসো, না দাদা?

 ডাক্তার বলিলেন, হাঁ।

 কেন?

 তোমাকেই বা কেন এত ভালবাসি তারই কি কারণ দিতে পারি দিদি? বোধ হয় এমনিই।

 ভারতী আদর করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছা দাদা, তোমার কাছে কি তবে আমরা দুজনে এক? কিন্তু পরক্ষণেই সহাস্যে বলিল, তবু ত নিজের দামটা এতদিনে টের পেলাম। চল, আমিও তোমার সঙ্গে গিয়ে এখন খুশী হয়ে তাদের আশীর্ব্বাদ না, না, প্রণাম করে আসি গে।

ডাক্তার হাসিলেন, বলিলেন, চল।

 জোয়ারের আশায় নদীর এপারে কোথাও দীর্ঘকাল অপেক্ষা করা নিরাপদ নহে,

২৩২