পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 হাঁ।

 সাহেব কহিলেন, ঠিক। লাঠি ঠুকেছিলে? অনধিকার প্রবেশের জন্য দোর ভাঙতে চেষ্টা করেছিলে?

 অপূর্ব্ব বিস্ময়ে স্তব্ধ হইয়া গেল। সাহেব বলিলেন, দৈবাৎ ঘর খোলা থাকলে ঘরে ঢুকে তুমি আমার স্ত্রীকে কিংবা মেয়েকে আক্রমণ করতে। তাই আমি জেগে থাকতে যাওনি?

 অপু ধীরে ধীরে কহিল, তুমি ত ঘুমিয়েছিলে, এ-সব জানলে কি করে?

 সাহেব কহিলেন, সমস্ত আমার মেয়ের কাছে শুনেচি। তাকে তুমি গালিগালাজ করে এসেচ। এই বলিয়া সে তাহার পার্শ্ববর্ত্তিনী কন্যাকে অঙ্গুলি-সংকেত করিল। এ সেই মেয়েটি, কিন্তু কালও ইহাকে ভাল করিয়া অপূর্ব্ব দেখিতে পায় নাই, আজও সাহেবের বিপুলায়তনের অন্তরালে তাহার কাপড়ের পাড়টুকু ছাড়া আর কিছু দেখিতে পাইল না। সে ঘাড় নাড়িয়া সায় দিল কিনা তাহাও বুঝা গেল না, কিন্তু এটুকু বোঝা গেল ইহারা সহজ মানুষ নয়। সমস্ত ব্যাপারটাকে ইচ্ছা করিয়া বিকৃত ও উল্টা করিয়া প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিতেছে। অতএব, অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

 সাহেব কহিলেন, আমি জেগে থাকলে তোমাকে লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দিতাম, এবং একটা দাঁতও তোমার মুখে আস্ত রাখতাম না, কিন্তু সে সুযোগ যখন হারিয়েছি, তখন পুলিশের হাতে যেটুকু বিচার পাওয়া যায় সেইটুকু নিয়েই এখন সন্তুষ্ট হতে হবে। আামরা যাচ্ছি, তুমি এ জন্য প্রস্তুত থাক গে।

 অপূর্ব্ব মাথা নাড়িয়া কহিল, আচ্ছা। কিন্তু তাহার মুখ অত্যস্ত স্নান হইয়া গেল।

 সাহেব মেয়ের হাত ধরিয়া কহিলেন, এসো। এবং নামিতে নামিতে বলিলেন, কাওয়ার্ড! অরক্ষিত স্ত্রীলোকের গায়ে হাত দেবার চেষ্টা। আমি তোমাকে এমন শিক্ষা দেব যা তুমি জীবনে ভুলবে না।

 তেওয়ায়ী পাশে দাঁড়াইয়া সমস্ত শুনিতেছিল, তাঁহারা অন্তর্হিত হইতেই কাঁদ-কাঁদ হইয়া কহিল, কি হবে ছোটবাবু?

 অপূর্ব্ব তাচ্ছিল্যভাবে কহিল, হবে আবার কি!

 কিন্তু তাহার মুখের চেহারা যে অন্য কথা কহিল, তেওয়ারী তাহা বুঝিল। কহিল, তখন ত বলেছিলুম বাবু, যা হবার হয়ে গেছে, আর ওদের ঘেঁটিয়ে কাজ নেই। ওরা হ’ল সাহেব-মেম।

 অপূর্ব্ব কহিল, সাহেব-মেম তা কি?

 তেওয়ারী কহিল, ওরা যে পুলিশে গেল!

২০