পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 শশী কহিল, প্রেসিডেণ্ট আপনাকে একবার দেখা করতে বলেচেন। তিনি সুরাভায়ার চলে যাচ্চেন।

 ডাক্তার বিস্ময় প্রকাশ করিলেন না, তবু প্রশ্ন করিলেন, কবে যাবেন?

 শশী কহিল, বললেন ত শীঘ্রই। তাঁকে লোক এসেচে নিতে।

 কথা ভারতীর কানে গেল, সে ফিরিয়া আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, সুমিত্রাদিদি কি সত্যই চলে যাবেন বলেচেন শশীবাবু?

 শশী বলিল, হাঁ সত্যি। তাঁর মায়ের খুড়োর অগাধ সম্পত্তি। সম্প্রতি মারা গেছেন—ইনি ছাড়া উত্তরাধিকারী আর কেউ নেই। তাঁর না গেলেই নয়।

 ডাক্তার কহিলেন, না গেলেই যখন নয়, তখন যাবেন বই কি।

 শশী ভারতীর মুখের প্রতি চাহিয়া বলিল, অনেক খাবার আছে, খাবেন কিছু? কিন্তু ভারতীর ইতস্ততঃ করিবার পূর্ব্বেই ডাক্তার সাগ্রহে বলিয়া উঠিলেন, নিশ্চয়, নিশ্চয়,—চল, কি আছে দেখিগে। এই বলিয়া তিনি শশীর হাত ধরিয়া একপ্রকার জোর করিয়া তাহাকে ঘরের ভিতর টানিয়া লইয়া গেলেন। যাবার পথে শশী আস্তে আস্তে বলিল, আর একটা খবর আছে ডাক্তার, অপূর্ব্ববাবু ফিরে এসেচেন।

 ডাক্তার বিস্ময়ে থমকিয়া দাঁড়াইয়া কহিলেন, সে কি শশী, কে বললে তোমাকে?

 শশী কহিল, কাল বেঙ্গল ব্যাঙ্কে একেবারে মুখোমুখি দেখা। তার মা নাকি বড় পীড়িত।


২৭

 শশী অতিশয়োক্তি করে নাই। ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখা গেল খাদ্যবস্তুর অত্যন্ত বাহুল্যে ঘরের দক্ষিণ ধারটা একেবারেই ভারাক্রান্ত হইয়া রহিয়াছে। ছোট-বড় ডেকচি, প্লেট, কাগজের ঠোঙা, মাটির বাসন পরিপূর্ণ করিয়া নানাবিধ আহার্য্য দ্রব্য সম্ভার দোকানদার ও হোটেলওয়ালার দল নিজেদের রুচি ও মর্জ্জি মত ওপার হইতে এপারে অবিশ্রাম সরবরাহ করিয়া স্তূপাকার করিয়াছে—অভাব বা ত্রুটি কিছুরই ঘটে নাই, ঘটিয়াছে কেবল সেগুলি উদরসাৎ করিবার লোকের। ডাক্তার ক্ষণকালমাত্র নিরীক্ষণ করিয়াই সোল্লাসে চীৎকার করিয়া উঠিলেন, তোফা! তোফা! চমৎকার! শশী কি হিসেবী লোক দেখেচ ভারতী, কে কি খাবে না-খাবে সমস্ত চিন্তা করে দেখেচ। বহুৎ আচ্ছা!

২৪৮