পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ভারতী অন্যদিকে চাহিয়া রহিল এবং শশী হাসিবার একটুখানি বিফল চেষ্টা করিল মাত্র। কোন দিক হইতে কোন সাড়া না পাইয়াও ডাক্তারের উল্লাস অকস্মাৎ অট্টহাস্যে ফাটিয়া পডিল, হাঃ হাঃ হাঃ! গৃহস্থের জয়জয়কার হোক,—শশী! কবি। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ!

 ভারতী আর সহিতে পারিল না, মুখ ফিরাইয়া সজলচক্ষে রুষ্ট দৃষ্টিপাত করিয়া বলিল, তোমার মনের মধ্যে কি একটু দয়া-মায়াও নেই দাদা? কি কোরচ বল ত?

 বাঃ! যাদের কল্যাণে আজ ভাল ভাল জিনিস পেট পুরে খাবো,—তাদের একটু আশীর্ব্বাদ—বাঃ! হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ।

 ভারতী রাগ করিয়া বারান্দায় চলিয়া গেল। মিনিট-দুই পরে শশী গিয়া তাহাকে ফিরাইয়া আনিলে সে প্লেটে করিয়া মাংস, পোলাও, ফল-মূল, মিষ্টান্নাদি সযত্নে সাজাইয়া ডাক্তারের সম্মুখে রাখিয়া দিয়া কৃত্রিম কুপিতস্বরে কহিল, নাও, এবার নাও, দশ হাত বার করে রাক্ষসের মত খাও। হাসি বন্ধ হোক, পাড়ার লোকের ঘুম ভেঙে যাবে।

 ডাক্তার নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, আহা উপাদেয় খাদ্য। এর স্বাদ গন্ধও ভুলে গেছি।

 কথাটা ভারতীর বুকে গিয়া বিঁধিল। তাহার সে রাত্রের শুকনা ভাত ও পোড়া মাছের কথা মনে পড়িল।

 ডাক্তার আহারে নিযুক্ত হইয়া কহিলেন, কবিকে দিলে না ভারতী।

 এই যে দিচ্ছি, এই বলিয়া সে প্লেট সাজাইয়া আনিয়া শশীর কাছে রাখিয়া দিয়া ডাক্তারের সম্মুখে বসিয়া বলিল, কিন্তু সমস্ত খেতে হবে দাদা, ফেলতে পারবে না।

 নাঃ—কিন্তু, তুমি খাবে না?

 আমি? কোন মেয়েমানুষ এ সব খেতে পারে? তুমিই বল?

 কিন্তু রেঁধেচে যেন অমৃত।

 ভারতী কহিল, এর চেয়ে ভাল অমৃত রেঁধে আমি বোজ রোজ তোমাকে খাওয়াতে পারি দাদা।

 ডাক্তার বাঁ হাতটা নিজের কপালে ঠেকাইয়া কহিলেন, কি করবে দিদি, অদৃষ্ট! যাকে খাওয়াবার কথা, সে এসব খাবে না, যে খাবে, তাকে একদিনের ওপর দুদিন খাওয়াবার চেষ্টা করিলেই সুখ্যাতিতে তোমার দেশ ভরে যাবে। ভগবানের এমনি উল্টো বিচার! কি বল কবি, ঠিক না? হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ।

 এবার ভারতী নিজেও হাসিয়া ফেলিল; কিন্তু তৎক্ষণাৎ আপনাকে সম্বরণ

২৪৯