পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নির্দ্দেশ করিয়া দেখাইল। কহিল, আপনার বালিশের তলায় রেখে দিয়েচি। পকেট থেকে বাইরে পড়ে যায়নি এই ভাগ্যি।

 কি করিয়া যে পড়িয়া গিয়াছিল এই কথা ভাবিতে ভাবিতে অপূর্ব্ব তাহার ঘরে চলিয়া গেল।


 রাত্রে আহারাদির পরে তেওয়ারী করজোড়ে সাশ্রুনয়নে কহিল, আর না ছোটবাবু, এইবার বুড়োমানুষের কথাটা রাখুন। চলুন, কাল সকালেই আমরা যেখানে হোক চলে যাই।

 অপূর্ব্ব কহিল, কাল সকালেই, কোথায় শুনি? তুই কি ধর্ম্মশালায় গিয়ে থাকতে বলিস নাকি?

 তেওয়ারী বলিল, এর চেয়ে সেও ভাল। মকদ্দমা জিতেছে, এইবার কোনদিন ঘরে ঢুকে আমাদের দু’জনকে মেরে যাবে?

 অপূর্ব্ব আর সহিতে পারিল না, রাগ করিয়া কহিল, তোকে কি আমার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতেই মা সঙ্গে দিয়েছিলেন? তোকে আর আমার দরকার নেই; কাল জাহাজ আছে, তুই বাড়ি চলে যা, আমার কপালে যা আছে তা হবে।

 তেওয়ারী আর তর্ক করিস না, আস্তে আস্তে শুইতে চলিয়া গেল। তাহার কথাগুলা অপূর্ব্বকে অপমানের একশেষ করিল বলিয়াই সে এরূপ কঠোর জবাব দিল, না হইলে সে যে বিশেষ অসঙ্গত কিছু কহে নাই অপূর্ব্ব মনে মনে তাহা অস্বীকার করিতে পারিল না। যাহা হৌক পরদিন সকাল হইতে একটা নূতন বাসার খোঁজ চলিতে লাগিল এবং শুধু তলওয়ারকর ছাড়া অফিসের প্রায় সকলকেই সে এই মর্ম্মে অনুরোধ করিয়া রাখিল! অতঃপর তেওয়ারীও অনুযোগ করিল না, অপূর্ব্বও মনের কথা প্রকাশ করিল না, কিন্তু প্রভু ও ভৃত্য উভয়েরই এক প্রকার সশঙ্কিত ভাবেই দিন কাটিতে লাগিল। আফিস হইতে ফিরিবার পথে অপূর্ব্ব প্রত্যহই ভয় করিত, আজ না জানি কি গিয়া শুনিতে হয়! কিন্তু কোনদিন কিছুই শুনিতে হইল না। মকদ্দমাবিজয়ী জোসেফ পরিবারের নানাবিধ ও বিচিত্র উপদ্রব নব নব রূপে নিত্য প্রকাশ পাইবে ইহাই স্বাভাবিক, কিন্তু উৎপাত ও দূরের কথা, উপরে কেহ আছে কি-না অনেক সময় তাহাই সন্দেহ হইতে লাগিল। কিন্তু

৩৫