পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিনি, হয়ত বিপদে পড়তেও পারি, তখন অপূর্ব্বর মুখ দিয়া সহসা কোন উত্তরই বাহির হইল না। ভারতী কপাট খুলিয়া ফেলিয়া কহিল, আমার মা ভয়ানক ভীতু মানুষ, তিনি আমাকে তখন থেকে বক্‌চেন যে আপনি বিশ্বাস না করলে আমাকেই চুরির দায়ে জেল খাটতে হবে। আমার কিন্তু সে ভয় একটুও নেই।

 অপূর্ব্ব বুঝিতে না পারিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কি হয়েছে?

 ভারতী কহিল, ঘরে গিয়ে দেখুন না কি হয়েছে। এই বলিয়া সে পথ ছাড়িয়া এক পাশে সরিয়া দাঁড়াইল। অপূর্ব্ব ঘরে ঢুকিয়া যাহা দেখিল তাহাতে দুই চক্ষু তাহার কপালে উঠিল। তোরঙ্গ দুটায় তালা ভাঙ্গা, বই, কাগজ, বিছানা, বালিশ, কাপড়চোপড় সমস্ত মেঝের উপর ছড়ান, তাহার মুখ দিয়া কেবল বাহির হইল, কি কোরে এমন হ’ল? কে করলে?

 ভারতী একটু হাসিয়া কহিল, আর যেই করুক কিন্তু আমি নয়, তা শত্রু হলেও আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে। এই বলিয়া সে ঘটনাটা যাহা বিবৃত করিল তাহা এই—দুপুরবেলা তাহার সদ্য পরিচিত দেশওয়ালী বন্ধুর সহিত তেওয়ারী যখন তামাশা দেখিতে বাহির হইয়া যায়, ভারতীর মা বারান্দায় বসিয়া তাহাদের দেখতে পান। অল্পক্ষণ পরেই নীচের ঘর হইতে একপ্রকার সন্দেহজনক শব্দ শুনিতে পাইয়া ভারতীকে দেখিতে বলেন। তাহাদের মেঝের একধারে একটা ফুটো আছে, চোখ পাতিয়া দেখিলে অপূর্ব্বর ঘরের সমস্তই দেখা যায়। সেই ফুটা দিয়া দেখিয়াই সে চীৎকার করিতে থাকে। যাহারা বাক্স ভাঙ্গিতেছিল তাহারা সবেগে পলায়ন করে, তখন নীচে নামিয়া সে দ্বারে তালা বন্ধ করিয়া পাহারা দিতে থাকে পুনরায় না তাহারা ফিরিয়া আসে। এখন অপূর্ব্বকে দেখিতে পাইয়া সে ঘর খুলিয়া দিতে আসিয়াছে!

 বিবর্ণ, পাংশুমুখে অপূর্ব্ব তাহার খাটের উপর ধপ্ করিয়া বসিয়া পড়িয়া স্তব্ধ হইয়া রহিল। ভারতী দরজা হইতে মুখ বাড়াইয়া কহিল, এঘরে আপনার কোন খাবার জিনিস আছে কি? আমি ঘরে এসে একবার দেখতে পারি?

 অপূর্ব্ব ঘাড় নাড়িয়া শুধু কহিল, আসুন।

 সে ঘরে আসিলে তাহার মুখপানে চাহিয়া অপূর্ব্ব বিমূঢ়ের মত প্রশ্ন করিল, এখন কি করা যায়?

 ভারতী কহিল, করা ত অনেক কিছু যায়, কিন্তু সকলের আগে দেখতে হবে কি কি চুরি গেছে।

 অপূর্ব্ব বলিল, বেশ ত তাই দেখুন না কি কি চুয়ি গেল।

 ভারতী হাসিয়া কহিল, আসবার সময় আপনার তোরঙ্গ গুছিয়েও আমি দিইনি, চুরিও করিনি,—সুতরাৎ কি ছিল আর কি নেই আমি জানাব কি করে?

৩৮