পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তাই ত বলচি, বলিয়া অপূর্ব্ব মুখ ভারি করিয়া আর একদিকে চোখ ফিরাইয়া রহিল।

 ভারতী জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কখনো কি কারও রোগে সেবা করেননি?

 না।

 আর কখনো বিদেশেও আসেননি?

 না। মা আমাকে কোথাও যেতে দেন না।

 তবে, এবার যে বড় আপনাকে ছেড়ে দিলেন?

 অপূর্ব্ব চুপ করিয়া রহিল। কেমন করিয়া এবং কি কারণে যে তাহার বিদেশে আসায় মা সম্মত হইয়াছিলেন একথা সে পরের কাছে বলিতে চাহিল না। ভারতী কহিল, এতবড় চাকরি— তা ছেড়ে দিলেই বা চলবে কেন? কিন্তু তিনি সঙ্গে এলেন না কেন?

 তাহার এই প্রকার তীক্ষ্ণ মন্তব্য প্রকাশে অপূর্ব্ব ক্ষুণ্ণ হইয়া বলিল, আমার মাকে আপনি দেখেননি, নইলে একথা বলতে পারতেন না। অনেক দুঃখেই আমাকে ছেড়ে দিয়েচেন, কিন্তু বিধবা মানুষ, এ ম্লেচ্ছ-দেশে তিনি আসবেন কেমন করে?

 ভারতী এক মুহূর্ত্ত স্থির থাকিয়া বলিল, ম্লেচ্ছদের প্রতি আপনাদের ভয়ানক ঘৃণা। কিন্তু রোগ ত শুধু গরীবের জন্য সৃষ্টি হয়নি, আপনারও তা হতে পারতো, এখনো ত হতে পারে, মা কি তাহলে আসবেন না?

 অপূর্ব্বর মুখ ফ্যাকাশে হইয়া গেল, কহিল, এমন করে ভয় দেখালে আমি কি করে একলা থাকবো?

 ভারতী কহিল, ভয় না দেখালেও আপনি একলা থাকতে পারবেন না। আপনি অত্যন্ত ভীতু মানুষ।

 অপূর্ব্ব প্রতিবাদ করিতে সাহস পাইল না, চুপ করিয়া বসিয়া রহিল।

 ভারতী হঠাৎ বলিয়া উঠিল, আচ্ছা, একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করি আমি। আমার হাতে জল খেয়ে তেওয়ারীর ত জাত গেছে, ভাল হয়ে সে কি করবে?

 অপূর্ব্ব ইহার শাস্ত্রোক্ত বিধি জানিত না, একটু চিন্তা করিয়া কহিল, সে তো আর সজ্ঞানে খায়নি, মরণাপন্ন ব্যারামে খেয়েচে, না খেলে হয় তা মরে যেত। এতে বোধ হয় জাত যায় না, একটা প্রায়শ্চিত্ত করলেই হতে পারে।

 ভারতী ভ্রূ-কুঞ্চিত করিয়া বলিল, হুঁ। তার খরচ বোধ হয় আপনাকেই দিতে হবে, —নইলে আপনি বা তার হাতে খাবেন কি করে?

 অপূর্ব্ব তৎক্ষণাৎ সায় দিয়া কহিল, আমিই দেব বৈ কি, নিশ্চয় দেব। ভগবান করুন সে শীঘ্র ভাল হয়ে উঠুক।

৭১