পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 রাগ করে চলে গেলেন নাকি?

 রাগ করে। অপূর্ব্ব একটু ভাবিয়া কহিল, কি জানি হতেও পারে। তাঁকে বোঝাই তো যায় না,—নইলে তোর উপর এত যত্ন, একবার খবর নিতেও ত এলেন না তুই ভাল হলি কিনা!

 এই কথা তেওয়ারীর ভাল লাগিল না। বলিল, তাঁর নিজেরই হয়ত অসুখ-বিসুখ কিছু করেচে।

 নিজের অসুখ-বিসুখ! অপূর্ব্ব চমকিয়া গেল। তাহার সম্বন্ধে অনেক দিন অনেক কথাই মনে হইয়াছে, কিন্তু কোনদিন এ আশঙ্কা মনেও উদয় হয় নাই। যাবার সময় সে হয়ত রাগ করিয়াই গিয়াছে এবং এই রাগ করা লইয়াই মন তাহার যত কিছু কারণ খুঁজিয়া ফিরিয়াছে। কিন্তু অন্য সম্ভাবনাও যে থাকিতে পারে এদিক পানে ক্ষুব্ধ চিত্ত তাহার দৃষ্টিপাতই করে নাই। হঠাৎ অসুখের কথায় এ লইয়া যত আলোচনা সে রাত্রে হইয়াছিল সমস্ত এক নিমিষে মনে পড়িয়া অপূর্ব্ব বসন্ত ছাড়া আর কিছুই ভাবিতে পারিল না। তাহার নূতন বাসায় দেখিবার কেহ নাই, হয়ত হাসপাতালে লইয়া গেছে, হয়ত এতদিনে বাঁচিয়াও নাই, মনে মনে সে একেবারে অস্থির হইয়া উঠিল। একটা চেয়ারে বসিয়া আফিসের কলার নেকটাই ওয়েস্টকোট খুলিতে খুলিতে তাহাদের আলাপ শুরু হইয়াছিল, হাতের কাজ তাহার সেইখানেই বন্ধ হইয়া গেল, মুখে তাহার শব্দ রহিল না, সেই চেয়ারে মাটির পুতুলের মত বসিয়া এই এক প্রকারের অপরিচিত, অস্পষ্ট অনুভূতিে যেন তাহাকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিল যে সংসারে আর তাহার কোন কাজ করিবার নাই।

 কিছুক্ষণ অবধি কেহই কথা কহিল না। এমনি একভাবে মিনিট কুড়ি-পঁচিশ কাটিয়া গেলেও যখন অপূর্ব্ব নড়িবার চেষ্টা পর্য্যন্ত করিল না, তখন তেওয়ারী মনে মনে শুধু আশ্চর্য্য নয়, উদ্বিগ্ন হইল। আস্তে আস্তে কহিল, ছোটবাবু, বাড়িওয়ালার লোক এসেছিল; যদি তেতালার ঘরটাই নেওয়া হয় ত, এই মাসের মধ্যেই বদলানো চাই বলে গেল। আমার ভাবনা হয় পাছে কেউ আবার এসে পড়ে।

 অপূর্ব্ব মুখ তুলিয়া বলিল, কে আর আসচে।

 তেওয়ারী কহিল, আজ মায়ের একখানা পোস্টকার্ড পেয়েচি। দরোয়ানকে দিয়ে তিনি লিখিয়েচেন।

 কি লিখেচেন?

 আমি ভাল হয়েচি বলে অনেক আহ্লাদ করেচেন। দরোয়ানের ভাই ছুটি

৮৩