পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিয়ে দেশে যাচ্ছে, তার হাতে বিশ্বেশ্বরের নামে পাঁচ টাকার পুজো পাঠিয়েচেন।

 অপূর্ব্ব কহিল, ভালই ত! মা তোকে ছেলের মত ভালবাসেন।

 তেওয়ারী শ্রদ্ধার বিগলিত হইয়া কহিল, ছেলের বেশি। আমি চলে যাবো, মার ইচ্ছে ছুটি নিয়ে আমরা দুজনেই যাই। চারিদিকে অসুখ-বিসুখ—

 অপূর্ব্ব কহিল, অসুখ-বিসুখ কোথায় নেই? কলকাতায় হয় না? তাই বুঝি ভয় দেখিয়ে নানা কথা লিখেছিলি?

 আজ্ঞে না। তেওয়ারী ভাবিয়া রাখিয়াছিল আসল কথাটা সে রাত্রে আহারাদির পরে ধীরে-সুস্থে পাড়িবে। কিন্তু আর অপেক্ষা করা চলিল না। কহিল, কালীবাবু একেবারে নাছোড়বান্দা হয়ে ধরেচেন। বোধহয় সকলেরই ইচ্ছে মাঝের চোত্ মাসটা বাদ দিয়ে বোশেখের প্রথমেই শুভ কাজটা হয়ে যায়।

 কালীবাবু অতিশয় নিষ্ঠাবান্ ব্রাহ্মণ, তাঁহার পরিবারের আচার-পরায়ণতার খ্যাতি প্রসিদ্ধ। তাঁহারই কনিষ্ঠা কন্যাকে মাতাঠাকুরাণী পছন্দ করিয়াছেন এ আভাস তাঁহার কয়েকখান। পত্রেই ছিল। তেওয়ারীর কথাট। অপূর্ব্বর ভাল লাগিল না। কহিল, এত তাড়াতাড়ি কিসের? কালীবাবুর গৌরীদানের সবুর না সয়, তিনি ত আর কোথাও চেষ্টা করতে পারেন।

 তেওয়ারী একটু হাসিবার চেষ্টা করিয়া কহিল, তাড়াতাড়ি তাঁর কি মা’র কি করে জানবো ছোটবাবু? লোকে হয়ত তাঁকে ভয় দেখায় বর্ম্মা দেশটা তেমন ভাল নয়,—এখানে ছেলেরা বিগড়ে যায়।

 অপূর্ব্ব খামোকা ভয়ানক জ্বলিয়া উঠিয়া কহিল, দেখ্ তেওয়ারী, তুই আমার ওপর অত পণ্ডিতি করিসনে বলে দিচ্ছি। মাকে তুই রোজ রোজ অত চিঠি লিখিস কিসের? আমি ছেলেমানুষ নই!

 এই অফারণ ক্রোধে তেওয়ারী প্রথমে বিস্মিত হইল, বিশেষতঃ রোগ হইতে উঠিয়া নানা কারণে তাহারও মেজাজ খুব ভাল ছিল না, সে রাগিয়া বলিল, আসবার সময় মাকে একথা বলে আসতে পারেননি। তাহলে ত বেঁচে যেতাম, জাত-জম্ম খোয়াতে জাহাজে চড়তে হোত না।

 অপূর্ব্ব চোখ রাঙ্গাইয়া চট্‌ করিয়া কলার ও নেকটাই তুলিয়া লইয়া গলার পরিতে লাগিল। তেওয়ারী বহুকাল হইতেই ইহার অর্থ জানিত। কহিল, তাহলে জলটল কিছু খাবেন না?

 অপূর্ব্ব তাহার প্রশ্নের জবাবে আলনা হইতে কোট লইয়া তাহাতে হাত গলাইতে গলাইতে দুম দুম করিয়া বাহির হইয়া গেল।

৮৪