ছুড়িটার যে কী হ্যাংলা স্বভাব—নিজের বাড়ী আছে, গিয়ে বসে কিনে খেগে যা না? তা না, লোকের দোর দোর—যেমন মা তেমনি ছা—
ইহাদের বাটীর বাহির হইয়া দুৰ্গা ভাইকে আশ্বাস দিবার সুরে বলিল—চিনিবাসের ভারী তো খাবার! বাবার কাছ থেকে দেখিস্ রথের সময় চারটে পয়সা নেবো—তুই দুটো, আমি দুটো। তুই আর আমি মুড়কী কিনে খাবো—
খানিকটা পরে ভাবিয়া ভাবিয়া অপু জিজ্ঞাসা করিল—রথের আর কতদিন আছে রে দিদি?
কয়েক মাস কাটিয়া গিয়াছে।
সর্ব্বজয়া ভুবন মুখুয্যের বাড়ীর কুয়া হইতে জল তুলিয়া আনিল। পিছনে পিছনে অপু মায়ের আঁচল মুঠা পাকাইয়া ধরিয়া ও বাড়ী হইতে আসিল। সর্ব্বজয়া ঘড়া নামাইয়া রাখিয়া বলিল—তা তুই পেছনে পেছনে অমন করে ঘুরতে লাগলি কেন বল্ দিকি? ঘরকন্নার কাজকর্ম্ম সারবো তবে তো ঘাটে যাবো? কাজ কর্ত্তে দিবি না—না? অপু বলিল—তা হোক্—কাজ তুমি ও বেলা ক'রো এখন মা, তুমি যাও ঘাটে। পরে মায়ের সহানুভূতি আকর্ষণের আশায় অতীব করুণস্বরে কহিল—আচ্ছা আমার খিদে কি পায় না? আজি চারদিন যে খাইনি।
—খাওনি তো করবো কি? রোদ্দুরে বেড়িয়ে বেড়িয়ে জ্বর বাধিয়ে বসবে, বল্লে কথা কানে নাও নাকি তোমরা? ছিষ্টির কাজ করবো তবে তো ঘাটে যাবো। বসে তো নেই? যা, ও-রকম দুষ্টুমি করিস্ নে—তোমাদের ফরমাজ মতো কাজ করবার সাধ্যি আমার নেই, যা—
অপু মায়ের আঁচল আরও জোর করিয়া মুঠা পাকাইয়া ধরিয়া বলিল—কক্ষনো তোমায় কাজ কর্ত্তে দেবো না। রোজই তো কাজ করো, একদিন বুঝি বাদ যাবে না? এক্ষুনি ঘাটে যাও—না, আমি শুন্বো না···করো দিকি কেমন কাজ করবে?
সর্বজয়া পুত্রের দিকে চাহিয়া হাসিয়া বলিল–ও রকম দুষ্টুমি করে না, ছিঃ–এই হয়ে গ্যালো বলে, আর একটুখানি সবুর করো।–ঘাটে যাবো, ছুটে এসে তোমার ভাত চড়িয়ে দোব-দুষ্টুমি করে কি? ছাড় আঁচল, ক’খানা পলতার বড়া ভাজা খাবি বল দিকি?
ঘণ্টাখানেক পর অপু মহা উৎসাহের সহিত খাইতে বসিল।
গ্লাস তুলিয়া সে ঢক্ ঢক্ করিয়া অর্ধেকখানি খালি করিয়া ফেলিয়া, পরে আরও দু’এক গ্রাস খাইয়া কিছু ভাত পাতের নীচে ছড়াইয়া বাকী জলটুকু শেষ করিয়া হাত তুলিয়া বসিল।
কৈ খাচ্ছিস, কৈ? এতক্ষণ তো ভাত ভাত ক'রে হাঁপাচ্ছিলে—পল্তার বড়া—পল্তার বড়া—ঐ তো সবই ফেলে রাখলি, খেলি কি তবে?