পাতা:পথের পাঁচালী.djvu/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পথের পাঁচালী
পথের পাঁচালী

সহিত কোনো আলাপ না করিয়া সোজা হন হন। করিয়া ভিতরের দিকের রোয়াকে উঠিলেন। নিজের ছেলের দিকে ফিরিয়া বলিলেন–কই নিয়ে আয়–বের কর পুতুলের বাক্স, দেখি–

এ বাড়ির কেহ কোনো কথা বলিবার পূর্বেই টুনু ও সন্তু, দুজনে মিলিয়া দুর্গার টিনের পুতুলের বাক্সটা ঘর হইতে বাহির করিয়া আনিয়া রোয়াকে নামাইল এবং টুনু বাক্স খুলিয়া খানিকটা খুঁজিবার পর একছড়া পুতির মালা বাহির করিয়া বলিল–এই দ্যাখো মা, আমার সেই মালাটা—সেদিন যে সেই খেলতে গিয়েছিল, সেদিন চুরি করে এনেচে।

সতু বাক্সের এক কোণ সন্ধান করিয়া গোটাকতক আমের গুটি বাহির করিয়া বলিল–এই দ্যাখো জেঠিমা, আমাদের সোনামুখী গাছের আম পেড়ে এনেচে।

ব্যাপারটা এত হঠাৎ হইয়া গেল বা ইহাদের গতিবিধি এ বাড়ির সকলের কাছেই এত রহস্যময় মনে হইল যে এতক্ষণ কাহারও মুখ দিয়া কোন কথা বাহির হয় নাই। এতক্ষণ পরে সর্বজয়া কথা খুজিয়া পাইয়া বলিল–কি, কি খুড়িমা? কি হয়েচে? পরে সে রান্নাঘরের দাওয়া হইতে ব্যগ্রভাবে উঠিয়া আসিল।

–এই দ্যাখো না কি হয়েচে, কীর্তিখানা দ্যাখো না একবার–তোমার মেয়ে সেদিন খেলতে গিয়ে টুনুর পুতুলের বাক্স থেকে এই পুতির মালা চুরি করে নিয়ে এসেচে-মেয়ে ক’দিন থেকে খুঁজে খুজে হয়রান। তারপর সন্তু গিয়ে বললে যে, তোর পুতির মালা দুগগাদিদির বাক্সের মধ্যে দেখে এলাম–দ্যাখো একবার কাণ্ড–তোমার ও মেয়ে কম নাকি? চোর-চোরের বেহদা চোর-—আর ওই দ্যাখো না-বাগানের আমগুলো গুটি পড়তে দেরি সয় না–চুরি করে নিয়ে এসে বাক্সে লুকিয়ে রেখেচে।

যুগপৎ দুই চুরির অতর্কিততায় আড়ষ্ট হইয়া দুৰ্গা পাঁচিলের গায়ে ঠেস দিয়া দাঁড়াইয়া ঘামিতেছিল। সর্বজয়া জিজ্ঞাসা করিল–এনিচিস এই মালা ওদের বাড়ি থেকে?

দুৰ্গা কথার উত্তর দিতে না দিতে সেজ-বৌ বলিলেন,–না আনলে কি আর মিথ্যে করে বলচি নাকি! বলি এই আম কটা দ্যাখো না? সোনামুখীর আমি চেনো, না কি? এও কি মিথ্যে কথা?

সর্বজয়া অপ্ৰতিভ হইয়া বলিল–না। সেজখুড়ি, আপনার মিথ্যে কথা তা তো বলিনি! আমি ওকে জিজ্ঞেস করচি।

সেজ-ঠাকরুন হাত নাড়িয়া ঝাঁজের সহিত বলিলেন–জিজ্ঞেস করো আর যা করো বাপু, ও মেয়ে সোজা মেয়ে হবে না। আমি বলে দিচ্চি–এই বয়েসে যখন চুরি বিদ্যে ধরেচে, তখন এর পর যা হবে সে টেরই পাবে! চল রে সতু-—নে আমের গুটিগুলো বেঁধে নে-বাগানের আমগুলো লক্ষ্মীছাড়া ছড়ির জ্বালায় যদি চোখে দেখবার জো আছে! টুনু, মালা নিইচিস তো?

সর্বজয়ার কি জানি কেমন একটু রাগ হইল–ঝগড়াতে সে কিছু পিছু হটবার পাত্র নয়, বলিল–পুতির মালার কথা জানিনে সেজ-খুড়ি, কিন্তু আমের গুটিগুলো, সেগুলো পেড়েছে কি তলা থেকে কুড়িয়ে এনেচে, তার গায়ে তো নাম লেখা নেই। সেজখুড়ি—আর ছেলেমানুষ যদি ধরো এনেই থাকে–

সেজ-ঠাকরুন অগ্নিমূর্তি হইয়া বলিলেন–বলি কথাগুলি তো বেশ কেটে কেটে বলচো? বলি আমের