পাতা:পথের পাঁচালী.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পথের পাঁচালী
পথের পাঁচালী

দুৰ্গা বলিল–দাঁড়া, এই মন্তরটা বলে নিয়ে চল এক জায়গায় যাবো।

–কোথা রে দিদি?

–চল না, নিয়ে যাবো এখন, দেখিস এখন–। পরে আনুষঙ্গিক বিধি-অনুষ্ঠান সাঙ্গ করিয়া সে এক নিশ্বাসে আবৃত্তি করিতে লাগিল–

পুণ্যিপুকুর পুষ্পমালা কে পুজে রে দুপুর বেলা?

আমি সতী লীলাবতী ভায়ের বোন ভাগ্যবতী–

অপু দাঁড়াইয়া শুনিতেছিল, বিদ্রুপের ভঙ্গিতে হাসিয়া বলিল–ইঃ।

দুৰ্গা ছড়া থামাইয়া ঈষৎ লজ্জা-মিশানো হাসির সঙ্গে বলিল–তুই ও-রকম কচ্চিস কেন? যা এখান থেকে–তোর এখানে কি?–যা।

অপু হাসিয়া চলিয়া গেল। যাইতে যাইতে আবৃত্তি করিতে লাগিল-আমি সতী লীলাবতী, ভাই বোন ভাগ্যবতী, হি হি–ভাই বোন ভাগ্যবতী–হি–হি–

দুৰ্গা বলিল, তোমার বড় ইয়ে হয়েচে, না? মাকে বলে তোমার ভ্যাংচানো বার করবো এখন―

ব্ৰতানুষ্ঠান শেষ করিয়া দুৰ্গা বলিল, চল গড়ের পুকুরে অনেক পানফল হয়ে আছে– ভোঁদার মা বলছিল, চল নিয়ে আসি–

গ্রামের একেবারে উত্তরাংশে চারিধারে বাঁশবন ও আগাছা এবং প্রাচীন। আম-কাঁঠালের বাগানের ভিতর দিয়া পথ। লোকালয় হইতে অনেক দূরে গভীর বন যেখানে শেষ হইয়াছে, সেখানে মাঠের ধারে মজা পুকুরটা। কোনকালে গ্রামের আদি বাসিন্দা মজুমদারদের বাড়ির চতুর্দিকে যে গড়খাই ছিল তাহার অন্য অংশ এখন ভরাট হইয়া গিয়াছে।–কেবল এই খাতটাতে বারো মাস জল থাকে, ইহারই নাম গড়ের পুকুর। মজুমদারদের বাড়ির কোন চিহ্ন এখন নাই।

সেখানে পৌঁছিয়া তাহারা দেখিল পুকুরে পানফল অনেক আছে বটে, কিন্তু কিনারার ধারে বিশেষ কিছু নাই, সবই জল হইতে দূরে। দূর্গ বলিল–অপু, একটা বাঁশের কঞ্চি দ্যাখ তো খুঁজে–তাই দিয়ে টেনে টেনে আনবো। পরে সে পুকুরধারের ঝোপের শেওড়া গাছ হইতে পাকা শেওড়ার ফল তুলিয়া খাইতে লাগিল। অপু বনের মধ্যে কঞ্চি খুঁজিতে খুঁজিতে দেখিতে পাইয়া বলিল-ও দিদি, ও ফল খাসনি!–দূর-আশ-শ্যাওড়ার ফল কি খায় রে! ও-তো পাখিতে খায়–

দুৰ্গা পাকা ফল টিপিয়া বীজ বাহির করিতে করিতে বলিল-আয় দিকি—দাখ দিকি খেয়ে-মিষ্টি যেন গুড়-কে বলেচে খায় না? আমি তো কত খোইচি।

অপু কিঞ্চি কুড়ানো রাখিয়া দিদির কাছে আসিয়া বলিল-খেলে যে বলে পাগল হয়? আমায় একটা দে দিকি, দিদি–

পরে সে খাইয়া মুখ একটু কাঁচুমাচু করিয়া বলিল—এন্টু এন্টু তেতো যে দিদি–