আছে, এমন সময় অপু পাশের একটা শেওড়া গাছের দিকে আঙুল দিয়া দেখাইয়া চেঁচাই দিয়া উঠিল-দিদি, দ্যাখ্ কি এখানে।···পরে সে ছুটিা গিয়া মাটি খুঁড়িয়া কি তুলিতে লাগিল!
দুর্গা জল হইতে জিজ্ঞাসা করিল—কি রে? পরে সেও উঠিয়া ভাইয়ের কাছে আসিল।
অপু ততক্ষণ মাটি খুঁড়িয়া কি একটা বাহির করিয়া কোঁচার কাপড় দিয়া মাটি মুছিয়া সাফ করিতেছে। হাতে করিয়া আহ্লাদের সহিত দিদিকে দেখাইয়া বলিল—দ্যাখ দিদি, চক্চক্ কচ্ছে—কি জিনিস রে?
দুর্গা হাতে লইয়া দেখিল—গোলমত একদিকে ছুঁচোলো পল-কাটাকাটা চক্চকে কি একটা জিনিস সে খানিকক্ষণ আগ্রহের সহিত নানাভাবে উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখিতে লাগিল।
হঠাৎ কি ভাবিয়া তাহার রুক্ষ চুলে-ঘেরা মুখ উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। সে ভয়ে ভয়ে চারিদিকে চাহিয়া দেখিল কেহ দেখিতেছে কিনা। চুপি-চুপি বলিল—অপু, এটা বোধ হয় হীরে! চুপ কর্, চেঁচাসনে পরে সে ভয়ে-ভয়ে আর একবার চারিদিকে চাহিয়া দেখিল।
অপু দিদির দিকে অবাক্ হইয়া চাহিয়া রহিল। হীরক বস্তুটি তাহার অজ্ঞাত নয় বটে,—মায়ের মুখে, দিদির মুখে রূপকথার রাজপুত্র ও রাজকন্যার হীরামুক্তার অলঙ্কারের ঘটা সে অনেকবার শুনিয়াছে কিন্তু হীরা জিনিসটা কি রকম দেখিতে, সে সম্বন্ধে তাহার মনে একটু ভুল ধরণ ছিল। তাহার মনে হইত হীরা দেখিতে মাছের ডিমের মত, হল্দে হল্দে, তবে নরম নয়—শক্ত।···
সর্ব্বজয়া বাড়ী ছিল না, পাড়া হইতে আসিয়া দেখিল—ছেলেমেয়ে বাড়ীর ভিতর দিকে দরজার কাছে দাঁড়াইয়া আছে। কাছে যাইতে দুর্গা চুপিচুপি বলিল—মা, একটা জিনিস কুড়িয়ে পেয়েচি আমরা গড়ের পুকুরে পান্ফল তুল্তে গিইছিলাম মা। সেখানে জঙ্গলের মধ্যে এইটে পোঁতা ছিল!
অপু বলিল—আমি দেখে দিদিকে বল্লাম, মা।
দুর্গা আঁচল হইতে জিনিসটা খুলিয়া মায়ের হাতে দিয়া বলিল—দ্যাখো দিকি কি এটা মা? সর্ব্বজয়া উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখিতে লাগিল। দুর্গা চুপিচুপি বলিল—মা, এটা ঠিক হীরে—নয়? সর্ব্বজয়ারও হীরক সম্বন্ধে ধারণা তাহাদের অপেক্ষা বেশী স্পষ্ট নহে। সে সন্দিগ্ধসুরে জিজ্ঞাসা করিল—তুই কি করে জান্লি হীরে? দুর্গা বলিল—মজুমদারেরা বড়লোক ছিলো তো মা? ওদের ভিটের জঙ্গলে কারা নাকি মোহর কুড়িয়ে পেয়েছিল—পিসি গল্প করতো। এটা একেবারে পুকুরের ধারে বনের মধ্যে পোঁতা ছিল রোদ্দুর লেগে চকচক কচ্ছিল,—এ ঠিক মা হীরে।
সর্ব্বজয়া বলিল—আগে উনি আসুন ওঁকে দেখাই।
দুর্গা বাহিরে উঠানে আসিয়া আহ্লাদের সহিত ভাইকে বলিল—হীরে যদি হয়, তবে দেখিস্ আমরা বড়মানুষ হরে যাবো।
অপু না বুঝিয়া বকর মত হি হি করিয়া হাসিল।
ছেলেমেয়ে চলিয়া গেলে জিনিসটা সর্ব্বজয়া ভাল করিয়া দেখিতে লাগিল। গোলমত,