পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সমুদ্রপাড়ি

ক্ষণে মাথা তুলিবার উপক্রম করিতেছে। মানুষের সুবিধাকে সৃষ্টি করিবার জন্য কল কেবলই বাড়িয়া চলিতেছে এবং মানুষের জায়গা কল জুড়িয়া বসিতেছে। কোথায় ইহার অন্ত? মানুষ আপনাকে আপনার অভাবপূরণের যন্ত্র করিয়া তুলিতেছে কিন্তু, সেই আপনাকে সে পাইবে কোন অবসরে? যেমন করিয়াই হউক, এক জায়গায় তাহাকে দাড়ি টানিয়া দিয়া বলিতেই হইবে, ‘এই রহিল আমার উপকরণ, এখন আমাকে আমার উদ্ধার করা চাই। যাহাতে আমার আবশ্যক তাহা আমাকে অবশ্য জোগাইতে হইবে, কিন্তু এ-সমস্তে আমার আবশ্যক নাই।’

 অর্থাৎ, মানুষের উদ্যম যখন কেবলই একটানা চলিতে থাকে তখন সে একটা জায়গায় আসিয়া আপনাকে আপনি ব্যর্থ করিয়া বসে। পূর্ণতার পথ সোজা পথ নহে। সেই জন্য আজ য়ুরোপের যাহা বেদনা আমাদের বেদনা কখনোই তাহা নহে। য়ুরোপ তাহার দেহকে সম্পূর্ণ করিয়া তাহার মধ্যে আত্মাকে প্রতিষ্ঠা করিতে চাহিতেছে। আমাদের আত্মা দেহ হারাইয়া প্রেতের মতো পৃথিবীতে নিষ্ফল হইয়া ফিরিতেছে। সেই আত্মার বাহ্য প্রতিষ্ঠা কোথায়? তাহার মধ্যে যে ঈশ্বরের সাধর্ম্য আছে, সে আপনার ঐশ্বর্য বিস্তার না করিয়া বাঁচে না। সে যে আপনাকে নানা দিকে প্রকাশ করিতে চায়— রাজ্যে, বাণিজ্যে, সমাজে, শিল্পে, সাহিত্যে, ধর্মে— এখানে সেই প্রকাশের উপকরণ কই? সেই উপকরণের প্রতি তাহার কর্তৃত্ব কোথায়? দেখিতেছি, তাহার কলেবর এক জায়গায় যদি বাঁধে তো আর-এক জায়গায় আলগা হইয়া পড়ে— ক্ষণকালের জন্য যদি তাহা নিবিড় হইয়া দাঁড়ায় তবে পরক্ষণেই বাষ্প হইয়া উড়িয়া যায়। তাই আজ

৪৯