পাতা:পথের সন্ধান - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বরাজ সৃষ্টি
১১

 আমাদের দেশে স্বরাজের রূপ নির্ণয় করবার পূর্বে এই কথাটা স্থির করা দরকার, কাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করবার জন্যে আমরা স্বরাজ চাই। দেশের সর্ব্ব সাধারণের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য যদি আমাদের উদ্দেশ্য হয়, তা'হলে জনকতক শিক্ষিত বা উচ্চ বর্ণের লোকের উপর শাসনভার অর্পণ করে' আমাদের নিশ্চিন্ত হওয়া চলবে না; কেননা অতীত অভিজ্ঞতার ফলে এইটুকু আমরা বেশ বুঝতে পেরেছি যে, দরিদ্রের বা অশিক্ষিতের মাথায় কাঁটাল ভেঙ্গে খেতে শিক্ষিত বা অভিজাত সম্প্রদায় কোনো দেশেই সঙ্কোচ করেনি। হিন্দু আমলে যখন রাজশক্তি ছিল ক্ষত্রিয়দের হাতে, তখন দেশের স্বাধীনতার জন্য শূদ্রদের গৌরব করবার বিশেষ কোনো কারণ ছিল বলে' মনে হয় না। আজও মধ্য- ভারতের যেসব জায়গায় ক্ষত্রিয় রাজা ভাঙ্গা সিংহাসনে বসে' রাজ্য শাসনের ভাণ করে' থাকেন, সেইসব জায়গায় রাজার কোনো স্বজাতির রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় নিম্নবর্ণের লোককে রাস্তা ছেড়ে একপাশে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। দেশ স্বরাজ পাবার পর যদি শাসনের অধিকার ঐ সব উচ্চবর্ণ বা ধনীলোকের হাতে “গিয়ে পড়ে ত দরিদ্র বা নিম্নবর্ণের লোকের সে রকম স্বরাজলাভের ফলে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মাত্রা যে খুব বেশী বাড়বে তা মনে হয় না।

 এতদিন পর্য্যন্ত স্বরাজলাভের চেষ্টা উচ্চশ্রেণীর মধ্যে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু বহু ব্যর্থ চেষ্টার ফলে তাঁদের এইটুকু জ্ঞান আজ হয়েছে যে, দেশের মধ্যে যারা সংখ্যার শতকরা আশীজন তাদের ছেঁটে ফেলে কোনো প্রচেষ্টারই সফল হবার সম্ভাবনা নেই।