পাতা:পথ ও পথের প্রান্তে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথে ও পথের প্রান্তে S&S মন ধড়ফড় ক’রে উঠল, বললে, আচ্ছা, তাই সই, যাব সেই অধ্যাপকবর্ষে, তারা যদি আমাকে বেঞ্চের উপর দাড় করিয়ে দেয় তবু তো খোলা জানলা দিয়ে কাচা সোনার মতো রোদ পড়বে আমার ললাটে, সেই হবে আমার বরমাল্য । ইতিমধ্যে ভানুসিংহের পত্রাবলী নতুন ছাপা হয়ে পড়ল আমার হাতে এসে । শান্তিনিকেতনের বর্ষার মেঘ ও শরতের রৌদ্রে পরিপূর্ণ সেই চিঠিগুলি। দূরদেশে এসে সেই চিঠিগুলি পড়ছি ব’লে সেগুলো এত পরিস্ফুট হয়ে উঠল । ক্ষণকালের জন্তে ভুলে গেলুম—কোথায় আছি। এত তফাৎ। এখানকার ভালো আর সেখানকার ভালোয় প্রভেদটা এখানকার সংগীত আর সেখানকার সংগীতের মতো । যুরোপের সংগীত প্রকাও এবং প্রবল এবং বিচিত্র, মানুষের বিজয়রথের উপর থেকে বেজে উঠছে। ধ্বনিটা দিগদিগন্তের বক্ষস্থল কঁাপিয়ে তুলছে। ব’লে উঠতেই হয়, বাহবা । কিন্তু আমাদের রাখালী বাশিতে যে-রাগিণী বাজছে, সে অামার একলার মনকে ডাক দেয় একলার দিকে, সেই পথ দিয়ে যে-পথে পড়েছে বাশবনের ছায়া, চলেছে জলভরা কলসী নিয়ে গ্রামের মেয়ে, ঘুঘু ডাকছে আমগাছের ডালে, আর দূর থেকে শোনা যাচ্ছে মাঝিদের সারিগান—মন উতলা ক’রে দেয়, চোখটা ঝাপসা ক’রে দেয় একটুখানি অকারণ চোখের জলে । অত্যন্ত সাদাসিধে, সেইজন্তে অত্যন্ত সহজ মনের আঙিনায় এসে আঁচল পেতে বসে । আমার নিজের সেদিনকার চিঠি যেন আমার আজকের দিনকে লেখা। কিন্তু জবাব ফিরিয়ে দেবার জো নেই ;