নাসার বেশর দোলে মারুত-হিল্লোলে,
নবীন কোকিলা যেন আধ-আধ বোলে।
আবেশে সখীর অঙ্গে অঙ্গ হেলাইয়া
বৃন্দাবনে প্রবেশিল শ্যাম জয় দিয়া।’’
অভিসার বর্ণনা করিতে করিতে কবি অনন্ত দাস চৈতন্যের ভাবে আবিষ্ট হইয়া পড়িয়াছেন। কারণ সে রাধা রূপক হইলেও, চৈতন্যেরই রূপ। অনন্ত দাস চৈতন্যের সমসাময়িক কবি, সংকীর্ত্তন-কালে তাঁহারই মুখ দেখিয়া অভিসারিকাকে আঁকিয়াছেন। অনন্ত দাস সংস্কৃতে সুপণ্ডিত ছিলেন, কিন্তু সেই রুপ দেখিয়া তিনি অলঙ্কারশাস্ত্র ভুলিয়া গেলেন। এই শাস্ত্রের নির্দ্দেশে মুখর নূপুর পা হইতে খুলিয়া ফেলিয়া নিঃশব্দে যাইতে হয়; (“মুখরমধীরং ত্যজ মঞ্জীরং”)—কিন্তু কবি লিখিলেন, “চৌদিকে রমণী সাজে, ডম্ফ রবাব বাজে”—সমস্ত আইন-কানুন উলটপালট হইয়া গেল, প্রেমযাত্রী এখানে রণ-যাত্রীর ন্যায় নির্ভীক; কলঙ্কের ভয় আর নাই—ডম্ফ, রবাব, রামশিঙ্গা বাজাইয়া চলিয়াছেন। ডম্ফ, অর্থাৎ জয়ঢাক, এত বড় এই যন্ত্র যে, একজন পিঠে বহে আর একজন বাজাইতে বাজাইতে যায়, তাহার প্রবল শব্দে দশদিক্ প্রকম্পিত হয়। এক কবি রাধার মুখে বলিতেছেন “ননদিনী তুই বল্ গিয়ে নাগরে, ডুবেছে রাই রাজ-নন্দিনী কৃষ্ণপ্রেম-কলঙ্ক-সাগরে।” অলঙ্কারশাস্ত্রের ক্ষীণপ্রাণা ভীরু অভিসারিকা এত জোর পাইবে কোথা হইতে? অভিসারিকার আর এখানে সে-যুগের ভয়-শঙ্কিতা মূর্ত্তি নাই, এই যুগের অভিসার অর্থ কৃষ্ণপ্রেমে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, কৃষ্ণ-প্রেমে গর্ব্বিত চৈতন্যের সংকীর্ত্তন, যাহারা কাজীর ফৌজের মাথায় ঢিল ছুঁড়িয়াছিল।
মনে হইতে পারে—সাম্প্রদায়িক ধর্ম্মের কথা এতটা স্পষ্ট করিয়া বলাতে কবিত্বের দিক্ হইতে কবি পথ-ভ্রষ্ট হইয়া পড়িয়াছেন; কিন্তু