পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১০৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৯৭

উপভোগ্য নহে। যে দুঃখসহ বিপদের পথ অতিক্রম করিয়া রাধা কৃষ্ণের কাছে উপনীত হইয়াছেন, তাহার বর্ণনা আমাদিগকে একটা কাল্পনিক জগতে লইয়া যায়; কিন্তু গূঢ় অন্তর্দৃষ্টিতে দেখিলে, সাধন-ক্ষেত্রে উহা ভক্তের সিদ্ধির ইঙ্গিত-স্বরূপ প্রতীয়মান হইবে।

‘‘মন্দির ত্যজি যব পদচারি আইনু, নিশি দেখি কম্পিত অঙ্গ,
তিমির দুরন্ত, পথ হেরই না পারই, পদযুগ বেড়ল ভুজঙ্গ।
একে কুলকামিনী, তাহে কুহু যামিনী, ঘোর গহন অতি দূর,
আর তাহে জলধর বরখিয়ে ঝর ঝর, হাম যাওব কোন পুর।
একে পদ-যুগ্ম পঙ্কে বিভূষিত, কণ্টকে জর জর ভেল।
তুয়া দরশন-আশে কিছু নাহি জানিনু চিরদুঃখ অব দূরে গেল।
তোহারি মুরলী যব শ্রবণে পশিল, ছোড়ল গৃহসুখ আশ।
পথহু দুঃখ তৃণ করি মানিনু, কহতহি গোবিন্দদাস।’’

 ‘‘কুহু যামিনী” অর্থে অমানিশা। এই ঘনান্ধকার বাদলে অমানিশায় ঘোর গহন পথে রাধা কোন্ পুরে যাইতেছেন? কৃষ্ণ তাঁহাকে দেখা দেওয়ার আশ্বাস দিয়া কোন্ পথে লইয়া যাইতেছেন, সে পথ বৃন্দারণ্যের শ্যামকুঞ্জে কিংবা যোগী-ঋষির অধ্যূষিত কোন নিবিড় গিরিগুহায়, তাহা রাধা জানেন না। শুধু মুরলীর ধ্বনি শুনিয়া, পথ-বিপথ গণ্য না করিয়া তিনি ছুটিয়া আসিয়াছেন। যেদিন তিনি তাঁহার সেই ডাক শুনিয়াছেন, সেই দিনই তাঁহার গৃহ-লোপের চিন্তা লুপ্ত হইয়াছে এবং সাধন-পথের এই সমস্ত ভীষণ কষ্ট তৃণবৎ উপেক্ষা করিয়াছেন। এই সুললিত ও সুমিষ্ট শব্দে গ্রথিত পদটি কি অধ্যাত্মপথের স্পষ্ট ইঙ্গিত নহে?

 কৃষ্ণদর্শনের এই যে দুর্দ্দমনীয় আবেগ ও গতিশীলতা, তাহা বিষ্ণুপদচ্যূতা সুরধূনীর স্রোতেরই মত। ইহা সাধারণ নায়ক-নায়িকা সন্ধন্ধে প্রযুজ্য নহে। এইজন্যই ইহা এমন নিছক কবি-কল্পনা ও গূঢ়-রহস্য-