ভাণ্ডার মুক্ত করিয়া দিতেছেন; সন্ন্যাসী তাহার নেংটী ছাড়িতেছে না, দিগম্বর সন্ন্যাসী সেই নেংটীটুকুও ফেলিয়া দিয়াছেন। এ যুগের প্রধান অস্ত্র অর্থের মুখ ভোতা হইয়া গেল, গান্ধিজী তাঁহার আটহাতী খদ্দর ছাড়িলেন না, এবং চার্চ্চহিলের কটুক্তি তাঁহার কাছে পুষ্পবৃষ্টির মত বোধ হইল।
সুতরাং এবম্বিধ ত্বৎ-সমর্পিত প্রাণ—একান্তভাবে ত্বদগত ও ত্বদবলম্বিত ব্যক্তির মান ভাঙ্গিতে যে ভগবান সাধ্যসাধনা করিবেন, বৈষ্ণবদের এই কল্পনার ভিত্তি-মূলে কতকটা পারমার্থিক সত্য নিহিত আছে, তাহা স্বীকার করিতে হইবে। বৈষ্ণবেরা নিবৃত্তির পথ মধুরাদপি মধুর করিয়াছেন—তাহা অনুরাগের দ্বারা পুষ্পাকীর্ণ করিয়া। মান-অধ্যায়ের ভূমিকা-স্বরূপ এইটুকু বলিয়া আমরা পদাবলীর উদ্যানে পুনরায় প্রবেশ করিব। বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস ও গোবিন্দ দাসের পরে মান সম্বন্ধে কীর্ত্তনীয়ারা যাঁহাদিগকে প্রধানতঃ অবলম্বন করিয়া থাকে, রায়শেখর ও শশিশেখর তাঁহাদের অন্যতম।
আমরা শশিশেখরের একটি পদ অবলম্বন করিয়া এই প্রসঙ্গ আরম্ভ করিব।
প্রথমেই কীর্ত্তনীয়া সখীগণপরিবৃতা রাধাকে মানের অবস্থায় শ্রোতৃমণ্ডলীর কাছে উপস্থিত করিল। কৃষ্ণ তাঁহার পদযুগল ধরিয়া আছেন। শুক-শারী বিবাদ করিতেছে; একজন কৃষ্ণ-পক্ষে, অপরে রাধা-পক্ষে। সখীরা ব্যধিকাকে গঞ্জনা করিয়া বলিতেছে, “শ্যামকে না দেখিলে মরবি, দেখিলেও মান করবি” এই রকমের উক্তি; কিন্তু চিত্রার্পিতা মূর্ত্তির ন্যায় রাধা বসিয়া আছেন, মুখে কোন কথা নাই। আপনারা বাজারে এই ভাবের অনেক চিত্র দেখিয়া থাকিবেন। এদিকে “চরণ-নথ রমণী-রঞ্জন ছাঁদ। ভূতলে লুটাইল গোকুলচাঁদ”—এই পদটি লইয়া অনেক টীকাকার ভুলের একটি দস্তুর-মত