তপ-সিদ্ধির প্রাক্কালে যোগী যেরূপ ধ্যানস্থ হইয়া আনন্দময়ের উপলদ্ধির পরীক্ষায় দাঁড়ায়—ইহা সেইরূপ ধ্যানের প্রতীক্ষা।
‘‘ধেয়ে গিয়ে শ্যামচাঁদ রাইকে ধরে কারে,
ললিতা দাঁড়িয়ে হাসে কুঞ্জলতার আঁড়ে।’’
কুঞ্জলতার ঘন অথচ তরল পত্রান্তরাল হইতে ললিতার দুটি সকৌতুক চক্ষু যুগল-মিলনের এই দৃশ্য দেখিতেছিল।
‘‘(তখন) শির হইতে গুঞ্জা ফল তুলি শ্যাম রায়,
নমো প্রেমময়ী বলিয়া দিলা রাধার পায়।”
এবং “খুলিয়া চাঁপার মালা এলায়ে কবরী,
বধুঁর যুগল পদ বাঁধেন কিশোরী।’’
এই যুগল-মিলনে দেব-দেবী উভয়ে উভয়ের পূজা করিতেছেন। দেহের চাঞ্চল্যের উর্দ্ধে—ভোগলালসার দুর্নীত হাওয়া যেখানে পৌঁছিতে পারে না, সেই অম্নান অধ্যাত্ম কুঞ্জবনে–ইঁহাদের লীলা, এবং ইহাই উচ্চাঙ্গের ভক্তের নিত্য বৃন্দাবন। ইন্দ্রিয় প্রশমিত না হইলে, দৈহিক কামনা একেবারে পুড়িয়া ছাই না হইয়া গেল কেহ বৃন্দাবনের কিশোর-কিশোরীর প্রেম বুঝিতে পারিবেন না, কবিরাজ ঠাকুর এই প্রেমকে “নির্ম্মল ভাস্কর” এবং লালসাকে “অন্ধ তম” বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন (“কাম অন্ধ তম প্রেম নির্ম্মল ভাস্কর”)।
এই মিলনের চিত্র নানা কবি নানা ভাবে আঁকিয়াছেন; একজন লিখিয়াছেন:—
“মোহন বিজন বনে, দূর গেল সখীগনে–
একেলি রহল ধনি রাই।
দুটি আঁখি ছল ছল, চরণ কমলতল
কানু আসি পড়ল লুটাই।
কমলিনী জীবন সফল ভেল মোর,
তোমা হেন গুণনিধি, পথে আনি দিল বিধি,
আজিকে সুখের নাহি ওর।”