পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১২৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১১৯

 আর এক কবি এই মিলনকালে বলিতেছেন, “আদরেতে আগুসারি, রাইকে হৃদয়ে ধরি”—কৃষ্ণ জানুর উপরে রাধার পা দু’খানি রাখিয়া মুগ্ধনেত্রে চাহিয়া আছেন, “নিজ কর-কমলে চরণযুগ মুছই, হেরই চির থির আঁখি।” রাধার পা দু’খানি দেখিয়া কৃষ্ণের চোখের তৃষ্ণা মিটিতেছে না, “এ ভর দুপুর বেলা, তাতিল পথের ধুলা, কমল তিহনিয়া পদ তোর,” পথে কোথায় কাঁটা পায়ে ফুটিয়াছে, দেখিতে যাইয়া কৃষ্ণ অশ্রুসংবরণ করিতে পারিতেছেন না এবং “পুছই পহু কি দুখ”—পথে কি কি কষ্ট পাইয়াছেন, অতি আদরে জিজ্ঞাসা করিতেছেন।

 রাধা ও কৃষ্ণ উভয়েরই পরস্পরের পদের দিকে দৃষ্টি—ইহাতে প্রমাণ হয়, এ প্রেমের জন্ম পূজার ঘরে। কবি কৃষ্ণকমল বলিয়াছেন—

‘‘অতুল রাতুল কিবা চরণ দুখানি,
আলতা পরাত বঁধু কতই বাখানি।’’

এই চরণ-পদ্মের শোভা এখনকার উচ্চ-গোড়ালী, খুরওয়ালা জুতার দিনে আমরা এ-যুগের তরুণদের কি করিয়া বুঝাইব? রবীন্দ্র বাবুর পরে আর কেহ রমণী-চরণের সৌন্দর্য্য বর্ণন করেন নাই।

 এই মিলন-দৃশ্যে রাধা-কৃষ্ণের গীতিকা অপূর্ব্ব আনন্দের ছবি অঙ্কিত করিয়াছে। পদ-সাহিত্যের কৌস্তুভমণি “জনম অবধি” এই পদটী মিলনের গীতি।

‘‘জনম অবধি হাম রূপ নেহারিলু—
নয়ন না তিরপিত ভেল।
সোহি মধুর বোল শ্রবণে হি শুনিলু,
শ্রুতিপথে প্রবেশ না গেল।
কত মধু যামিনী—রভসে গোয়াইলু,
না বুঝিলু কৈছন কেলি,
লাখ লাখ যুগ হিরে হিয়া রাখিলু
তবু হিয়া জুড়ন না গেলি।’’