পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১২৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১২৩

হইতে বাঙালার হাওয়ায় ঘুরিতেছে। মিথিলার সঙ্গে ইহার কোনই সম্পর্ক নাই। আমি ত্রিপুরার জঙ্গলে গ্রাম্য কৃষকের মুখে ভাটিয়াল সুরে এই গানের মর্ম্ম শুনিয়াছি—“আমি মৈলে এই করিও, না পেড়োয়ো না ভাসায়ো”, অন্যান্য বহু বঙ্গীয় বৈষ্ণব কবির কণ্ঠে ভিন্ন ভিন্ন ছন্দে মনোহরসাই রাগিণীতে এই গীতি শোনা গিয়াছে। “আমার নীরে নাহি ডারবি, অনলে নাহি পোড়াবি” কিম্বা “দেহ দাহন ক’র না দহন দাহে, ভাসায়ো না তাহা যমুনা প্রবাহে” এবং “প্রাণ যদি দেহ ‍ছাড়া, না দ’হ বহ্নিতে মোরে না ভাসায়ো যমুনা সলিলে” প্রভৃতি বহু পদে, বাঙালার প্রতি কোণে কোণে শত শত নরনারী-কণ্ঠে যে-কথা বহুকাল হইতে প্রতিনিয়ত ধ্বনিত হইয়া আসিয়াছে, বাঙালা দেশের সেই মর্ম্মোক্তি, বাঙালা ভাষায় রচিত। বাঙালা ছন্দে গ্রথিত সেই গানটি কেন যে বিদ্যাপতির পদাবলীর মধ্যে আসন পাইল এবং সুবিজ্ঞ সম্পদকেরাই বা কেন এই অনধিকার-প্রবেশ সম্বন্ধে চুপ করিয়া রহিলেন, তাহা তাঁহারাই জানেন! এইরূপ আরও অনেক বাহিরের পদ বিদ্যাপতির পদ-সংগ্রহে ঢুকিয়া বইখানি ধাউসের মত বৃহদাকৃতি করিয়া তুলিয়াছে। দৃষ্টান্ত স্থলে আরও কয়েকটি পদের প্রথম দুই এক ছত্র উল্লেখ করিতেছি—সেগুলি নিছক বাঙ্গালা পদ—“আজি কেন তোমায় এমন দেখি, সঘনে ঘুরিছে অরুণ আঁখি”“শুনলো রাজার ঝি তোরে কহিতে আসিয়াছি, কানু হেন ধন, পরাণে বধিলি, এ কাজ করিলি কি?”

 মিলনের দৃশ্য আরও অনেক কবি দেখাইয়াছেন, তাহাদের কোন কোনটিতে অধ্যাত্মরাজ্যের ছায়া পড়িয়াছে। “আজি নিধুবনে শ্যাম-বিনোদিনী ভোর, দোঁহার রূপের নাহিক উপমা, সুখের নাহিক ওর” পদটি দৃষ্টান্ত-স্বরূপ গৃহীত হইতে ‍পারে। এই জগতে একদিকে ঘননীল বনান্ত ও সুনীল নভস্তল, অপরদিকে সোনালী রৌদ্র ঝক্ ঝক্