মান কীর্ত্তনীয়ারা আসরে গায় না—কারণ ইহার প্রতিটি ছত্রে যে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে, তাহা শীলতার হানিকর। কিন্তু যাঁহারা ভাগবানের চরণে সমর্পিতপ্রাণ রসিক ভক্ত, তাঁহারা গোপীদের মনোবেদনাপূর্ণ শ্লেষের ভাষার মধ্যে করুণাময়ের প্রতি ব্যথিত চিত্তের অশ্রুভারাক্রান্ত নিবেদনের ভাব উপলব্ধি করিয়া থাকেন।
সেকালের রুচি আর একালের রুচির লক্ষ্য পৃথক। এখনকার লোকেরা জগতের অদ্বৈতরূপ দেখিতে পান না। ভাল-মন্দ, পবিত্র-অপবিত্র, ভষ্ম-চন্দন প্রভৃতি সমস্ত ব্যাপিয়া যাঁহার সত্বা, তাঁহাকে তাঁহারা পোষাকী করিয়া মন্দির মধ্যে—জগৎ হইতে স্বতন্ত্র স্থানে তুলিয়া রাখিতে চান; প্রাচীনেরা তাঁহাদের সমস্ত ক্রিয়া কর্ম্ম, লীলা খেলারও মধ্যে তাঁহাকে না পাইলে তৃপ্ত হইতেন না। যাঁহাকে তাঁহারা পূজার ঘরে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন, তাঁহাকে তাঁহারা খেলার ঘরে আনিতেও দ্বিধা বোধ করিতেন না। সমস্ত দেহ ও সর্ব্বেন্দ্রিয় এবং মন দ্বারা তাঁহাকে সেবা করা—এই ছিল তাঁহাদের ভাবধারা। ভক্তি-ভস্ম গায় মাখিয়া তাঁহারা প্রেম-মধুচক্রে প্রবেশ করিতেন, তখন তাঁহারা ইন্দ্রিয়-মক্ষিকার দংশনের অতীত হইয়া থাকিতেন। কোন একটি ভাল কীর্ত্তনের আসরে ভক্তের কণ্ঠে কীর্ত্তন শুনিলে, আমি যাহা বুঝাইতে এত কথা বলিলাম, তাহা পাঠক অনায়াসে বুঝিতে পারিবেন। আমি সেই ভক্তির কণা কোথায় পাইব, যাহার বন্যাস্রোতে মহাপ্রভু এদেশের নিম্নশ্রেণীকে মাতাইয়াছিলেন! পণ্ডিতেরা সেই ভক্তির অমৃতভাণ্ড ফেলিয়া দিয়াছেন, নিম্নশ্রেণীর লোকেরা এখনও সেই প্রসাদ কুড়াইয়া রাখিয়া দিয়াছে।
এদেশের কীর্ত্তনের একটা বিশেষ মূল্য আছে। গণিকারাও কীর্ত্তন গাহিয়া থাকে। তাহাদিগকে ব্রহ্মসংগীত, রামপ্রসাদ ও দাশরথীর গান,