বাউল সংগীত, টপ্পা, খেয়াল, গোপাল উড়ের গান, নিধুবাবুর গান প্রভৃতি যাহা কিছু গাহিতে বলা যায়, তাহাই গাহিবে। কীর্ত্তন গাহিতে হইলে বলিবে, “স্নান করিয়া কাপড় ছাড়িয়া আসি”; শুদ্ধা, স্নাতা না হইয়া তাহারা কীর্ত্তন গায় না। কীর্ত্তন সম্বন্ধে এদেশের জন-সাধারণের কিরূপ উচ্চ ধারণা, তাহা ইহা হইতে বুঝা যায়।
কৃষ্ণ গোপীদের শ্লেষের উত্তরে অনেক উপদেশ দিয়াছেন, গোপীরা বলিতেছে—
“ভাল ভাল ভাল, কালিয়া নাগর, শুনালে ধরম কথা,
সরলা-বালিকা ছলিলে যখন, ধরম আছিল কোথা?
চলিবার তরে কর উপদেশ পাথর চাপিয়া পিঠে,
বুকেতে মারিয়া ছুরির ঘা, তাহাতে নুনের ছিটে।”
—সেই ভবঘুরে কৃষ্ণের জগতে কোথায় গতিবিধি নাই? ধর্ম্মযাজকের ভজন-মন্দির ও মাতালের আড্ডা—সর্ব্বত্র তাঁহার অবাধ গতি। এজন্য গোপী বলিতেছে—
‘‘সোনা, রূপা, কাঁসা চোর কি বাছে,
চোরের কখন কি নিবৃত্তি আছে?’’
আধুনিক শিক্ষিত সম্প্রদায় এই সকল গানের মূল্য ধর্ম্মের দিক্ দিয়া স্বীকার করিবেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু বঙ্গদেশে প্রেমের পথে সাধকের অভাব নাই। পল্লীর কুটিরে এখনও বৃদ্ধ বৈষ্ণব একতারা লইয়া এই ধরণের গান গাহিয়া কাঁদিয়া বিভোর হন। সোণার পুতুল রাই-এর কষ্টে তাঁহার প্রাণ বিগলিত হয়। গৌরাঙ্গকে কৃষ্ণ একবার দেখা দিয়া পুনরায় অদৃশ্য হইয়া যত কাঁদাইয়াছেন—সেই কথা তাহার মনে পড়ে। সে ইন্দ্রিয়াতীত রাজ্যের বিশুদ্ধ লীলার স্বাদ আমরা কোথায় পাইব?—যাহা খড়-কুটোকে সিঁড়িরূপে ব্যবহার করিয়া ভক্তির রাজ্যে পৌছাইয়া দেয়!