তোমরা তেমনই প্রেমের ভিখারী মনে করিয়া কটুক্তি করিতে পারিবে?
এই গানে ব্রজের সুরটি নাই। নিত্য-বৃন্দাবনের লীলা অফুরন্ত; মথুরা তাহা নষ্ট করিতে পারে নাই, বরং ঐশ্বর্য্য-ধাঁধা ঘুচাইয়া ব্রজের গভীর প্রেমকে আরও বড় করিয়া দেখাইয়াছে। নিত্য বৃন্দাবনের সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর রসের উৎস কি কখনও ফুরাইবার ও শুকাইবার? পূর্ব্বোক্ত গানটি একান্ত আধুনিক—উহা আমাদের বর্ত্তমান কালের গৃহছাড়া হতভাগ্যদের জন্ম-পল্লীর কথা মনে জাগাইয়া দিয়া মর্ম্ম স্পর্শ করে।
রাধাকৃষ্ণ-লীলার অধ্যায়ে অধ্যায়ে এইভাবে হাস্য-রসের চাটনির পর্য্যন্ত অধিবেশন হইয়াছে। দানলীলা, নৌ-বিলাস ও মানভঞ্জনের পালায় এই রস একান্ত বাস্তব জগতের সামগ্রী হইয়া দাঁড়াইয়াছে। কিন্তু মনে রাখিতে হইবে, অত্যন্ত প্রগাঢ় ভাবের ক্ষেত্রে ইহাদের জন্ম, সুতরাং তরল হাস্য ও চাপল্যের মধ্যে সময়ে সময়ে উচ্চাঙ্গের ভাবধারার সন্ধান ইহাতে দুর্ল্লভ হয় না—যেরূপ রূপার খনিতে কখনও কখনও সোণা পাওয়া অসম্ভব নহে। রাধার মান ভাঙ্গাইবার জন্য কৃষ্ণ কখনও নাপিত-বধূ, কখনও দোয়াসিনী (যোগিনী), কখনও বনিকিনী, কখনও বা গায়িকার ছদ্মবেশে আসিয়াছেন, সেই সেই দৃশ্যে পাঠক অনেক আমোদ-প্রমোদর কথা পাইবেন। গোবিন্দ দাসের একটি পদ এখানে উদ্ধৃত করিতেছি:—
‘‘গোরথ জাগাই শিঙা ধ্বনি শুনইতে
জটিলা ভিক্ আনি দেল।
মৌনী যোগেশ্বর মাথা হিলাইত,
বুঝল ভিক নাহি নেল।