পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৫৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪৮
পদাবলী-মাধুর্য্য

বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাস

 বিদ্যাপতির প্রথম জীবনের প্রেরণা আসিয়াছিল জয়দেবের গীত-গোবিন্দ হইতে। বাক্যের পারিপাট্যে, ছন্দের ঝঙ্কারে এবং অলঙ্কার শাস্ত্রানুগত নায়ক-নায়িকার চিত্রাঙ্কণে রাজকবি বিদ্যাপতি দরবারী সাজেই দেখা দিয়াছেন। শিবসিংহ, লছিমাদেবী ও মিথিলার বড় বড় পণ্ডিতগণ তাঁহার শ্রোতা। কোন স্থানে শব্দের অপপ্রয়োগ ছন্দ ও কাব্যশ্রীর চ্যূতি বিচ্যূতি হইলে তিনি রেহাই পাইতেন না। বিদ্যাপতি স্বয়ং সুপণ্ডিত ছিলেন এবং সংস্কৃতে অনেক কাব্য প্রণয়ন করিয়াছিলেন; রাজসভা-পূজিত পণ্ডিত বংশে তাঁহার জন্ম। তিনি স্থান কাল ও পাত্রের উপযোগীভাবে রাধাকৃষ্ণের লীলা গাহিয়া ‘নবজয়দেব’ উপাধি লাভ করিয়াছিলেন। কিন্তু চণ্ডীদাস নিজকে একজন পূজারী ব্রাহ্মণ (বাশুলী-পূজক) বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন। কেহ তাঁহাকে কোনও উপাধি দেন নাই। বড়ু, দ্বিজ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করিয়া তিনি যে ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন—এইটুকু মাত্র জানাইয়াছেন। তাঁহার ভ্রাতা নকুলের কথা অনুসারে তাঁহাকে মহাপণ্ডিত বলিয়া মনিয়া লইলেও তিনি যে একেবারেই পাণ্ডিত্যভিমানী ছিলেন না—ইহা নিশ্চয় বলা যাইতে পারে। প্রথম বয়সের করিতায় কিছুকাল জয়দেবের লেখা মক্‌স করিলেও, অনতি পরেই সেই অনুকরণের প্রবৃত্তি ছাড়িয়া দিয়াছিলেন। তাঁহার হৃদয়ে স্বয়ং ভারতী দেবী পদ্মাসন পাতিয়া বসিয়াছিলেন এবং মুখে কবিতার ভাষা জোগাইয়াছিলেন। কাব্য-জগতে এই সিদ্ধি লাভ করিবার পর, সমস্ত কাব্যসংস্কার এবং কবিপ্রসিদ্ধির এলাকা অতিক্রম করিয়া গিয়াছিলেন।

 বিদ্যাপতি-রচিত পূর্ব্বরাগের বর্ণিত রাধা অলঙ্কার-শাস্ত্রের নায়িকা, বাহ্যরূপে ঢলমল। রাধা-নাম ও রাধা-ভাবের সঙ্গে আমাদের মনে যে