পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৫৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১৫৩

আবির্ভূত হইয়াছিলেন। কবি ও দ্রষ্টাদের মনে ভবিষ্যাৎ ঘটনার এইরূপ প্রতিবিম্ব পড়িয়া থাকে, তাহা ছাড়া সেই দুইটি পংক্তি যে নিশ্চিতরূপে গৌরাঙ্গ-আবির্ভাবের সূচক—তাহাই বা কিরূপে বলা যায়? রাধিকার বেশভূষা দেখিয়া কবি বলিতেছেন, এ আবার কেমন বেশ, এরূপ কোন্‌ দেশে পাইলে? তিনি হাসিয়া এই কথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন। এই ভাবের ইঙ্গিত পদটির পূর্ব্ব একটি ছত্রেও পাওয়া যাইতেছে—এ না বেশ কোন দেশে ছিল? অতিরিক্ত মাত্রায় বিজ্ঞানবিৎ পণ্ডিতগণের অনুমানগুলিকে আমরা অনুমান বলিয়াই গ্রহণ করিব, সেগুলি সিদ্ধান্ত নহে। রাধাকৃষ্ণ-লীলাপ্রসঙ্গে চণ্ডীদাস এত কথা লিখিয়াছেন যে, শুধু এই দুটি পদে নহে, অনেক স্থলে টানিয়া বুনিয়া অর্থ করিলে তাহা চৈতন্য-আবির্ভাবের আভাস বলিয়া ধরা যাইতে পারে—তাঁহার সেই সেই পদে চৈতন্যের পাদক্ষেপের নূপুরধ্বনি শোনা যায়, কেবল অনুমান ও খামখেয়ালীর বলে এইসমস্ত পদ প্রক্ষিপ্ত বলিয়া আমরা স্বীকার করিতে প্রস্তুত নহি। চণ্ডীদাসের আর একটি পদ এই:—

‘‘অকখন বেরাধি এ কহা নাহি যায়,
যে করে কানুর নাম তার ধরে পায়।
পায়ে ধরি কাঁদে সে চিকুর গড়ি যায়,
সোণার পুতলী যেন ধূলায় লুটায়।”

 চৈতন্য দেব যাঁহার মুখে কৃষ্ণ-নাম শুনিয়াছেন, তাঁহারই পায়ে লুটাইয়া পড়িয়াছেন; তাই বলিয়া এই ধ্রুব-প্রহ্লাদ-নারদ-মাধবেন্দ্র পুরীর দেশে যে কৃষ্ণ-নামের এই মাহাত্ম্য সমস্তই চৈতন্যে আরোপ করিয়া কবির উক্তি প্রক্ষিপ্ত বলিতে হইবে–বৈজ্ঞানিকের এই বাড়াবাড়ি তো অসহ্য!

 অষ্ট সাত্ত্বিক বিকার সম্বন্ধে চৈতন্যের বহু পূর্ব্ব হইতে এইদেশীয় লোকেরা অবহিত ছিলেন। কাহারও যদি কৃষ্ণ-নাম বলিতে রোমাঞ্চ