পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১৬০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫৪
পদাবলী-মাধুর্য্য

হয়, কিম্বা কেহ যদি নির্জ্জনে তমাল তরুকে আলিঙ্গন করে (“বিজনে আলিঙ্গই তরুণ তমাল) তবে সে-সকলই চৈতন্য-প্রভাবান্বিত, সুতরাং পূর্ব্ববর্ত্তী কবির পদে ঐরূপ কিছু পাওয়া গেলে তাহা প্রক্ষিপ্ত—ইহা বলা সঙ্গত হইবে না।

 চণ্ডীদাস প্রেম সম্বন্ধে কয়েকটি সার কথা বলিয়াছেন—তাহা অন্যত্র সুলভ নয়;

‘‘পীরিতি করিয়ে ভাঙ্গয়ে যে
সাধন সঙ্গ পায়না সে।’’

 পরস্পরের প্রতি গভীর অন্যায় প্রমাণিত হইলে দাম্পত্য বর্জ্জননীতি সমর্থিত হয়। হিন্দুদিগের মধ্যে যদিও স্বামী স্ত্রীকে বর্জ্জন করিতে পারেন কিন্তু স্ত্রী স্বামীকে বর্জ্জন করিতে পারেন না। এই তালাকের ব্যবস্থা যে অন্যায় তাহা চণ্ডীদাস বলেন নাই। একজনকে বর্জ্জন করিয়া নূতন একজনকে গ্রহণ করিয়া অনেক স্থলে লোকে সুখী হইয়া থাকে। চণ্ডীদাস তাহাও অস্বীকার করেন নাই। কিন্তু তিনি বলিয়াছেন, প্রেম-সাধনার পথে বর্জ্জননীতি একবারেই অচল। বর্জ্জন করিয়া অন্যকে গ্রহণপূর্ব্বক কেহ সুখী হইতে পারেন, কিন্তু তিনি যদি প্রেমের সাধনা করিতে চান—তবে তাঁহার সঙ্কল্প বিফল হইবে। বর্জ্জনের আইন সাংসারিকের পক্ষে, কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে সিদ্ধিলাভ করিতে হইলে সমস্ত দুঃখ-কষ্ট মাথায় লইয়া সেই পথে দৃঢ় থাকিতে হইবে। চন্দ্রের জ্যোৎস্না কণ্টকের পথ দেখিয়া ফিরিয়া যায় না, সেই কণ্টকের ’পরেই লুটাইয়া পড়ে; ফুলের গন্ধ বিষাক্ত স্থান দেখিয়া ফিরিয়া যায় না, তাহার প্রবাহ অব্যাহত থাকে। দানেই প্রেমের তৃপ্তি, সে দান একেবারে নির্ব্বিচার! সেখানে প্রেম পণ্যদ্রব্য নহে, দেওয়ার মধ্যে ফিরিয়া পাইবার কোন সত্ত্ব নাই, সে কেবলই দেওয়া। যাহাকে